ডেস্ক রিপোর্ট ঃ
বাংলাদেশে কোভিড-১৯ টিকা প্রদানের খরচের ক্ষেত্রে সরকারি হিসেব এবং বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি’র এর হিসেবের মধ্যে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার ফারাক দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত মার্চ মাসে বলেছিলেন, কোভিড-১৯ টিকা ক্রয় এবং বিতরণের ক্ষেত্রে ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
কিন্তু মঙ্গলবার এক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় টিআইবির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই খরচ সর্বোচ্চ ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি হবার কথা নয়।
‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবেলায় সুশাসন: অন্তর্ভুক্তি ও স্বচ্ছতার চ্যালেঞ্জ’ শিরোনামে এই গবেষণা প্রকাশ করে টিআইবি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, টিকা ক্রয়ে বাংলাদেশের খরচ হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
এসব টিকা কত দামে কেনা হয়েছে তার বিস্তারিত কখনোই তুলে ধরেনি স্বাস্থ্য বিভাগ।
টিআইবি তাদের গবেষণায় বলছে, টিকা ক্রয়ের ক্ষেত্রে সাড়ে এগারো হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হবার কথা নয়।
তারা দাবি করছে, যেহেতু সরকারের তরফ থেকে টিকার দাম সম্পর্কিত কোন তথ্য তুলে ধরা হয়নি, সেজন্য টিআইবি বিভিন্ন সূত্র থেকে টিকার দাম সম্পর্কিত তথ্য জোগাড় করেছে।
তবে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো: মাইদুল ইসলাম প্রধান বিবিসি বাংলাকে বলেন টিকা ক্রয় এবং সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে মন্ত্রী যে হিসেব তুলে ধরেছেন সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন সুযোগ নেই।
“তারা হিসেবটা কিভাবে করলো সেটা আমরা দেখি। এটা আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেটা দেখবেন। দেখে তারপর আমাদের হিসেবে সাথে মিলিয়ে দেখলেই হয়ে যাবে। এটা পানির মতো পরিষ্কার,” বলেন মি. প্রধান।
তিনি বলেন, কোন খাতে কত টাকা খরচ হয়েছে সেটি পরিষ্কারভাবে লিপিবদ্ধ আছে।
“এখানে আড়াল করার কিছু নেই। এবং মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের তথ্য ভুল হবারও সুযোগ নেই,” বলেন মি. প্রধান।
গত জুলাই মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিল টিকা প্রতি ব্যয় তিন হাজার টাকা।
অথচ টিআইবি বলছে, টিকা প্রতি খরচ সবোর্চ্চ খরচ হতে পারে ২২৫ টাকা।
টিআইবির গবেষক মোহাম্মদ জুলকারনাইন বলেন, কোভ্যাক্স রেডিনেস এন্ড ডেলিভারি ওয়ার্কিং গ্রুপ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর টিকার পরিচালন ব্যয় সম্পর্কে একটি মডেল দাঁড় করিয়েছে।
এই মডেলের মাধ্যমে তারা দেখিয়েছে টিকা প্রতি খরচ কেমন হতে পারে।
গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময়ে মি. জুলকারনাইন বলেন, “এখানে বলা হয়েছে টিকা প্রদানের সাথে যত খরচ সম্পৃক্ত – অর্থাৎ টিকা পরিবহন, সংরক্ষণ, টিকাকর্মী নিয়োগ এবং তাদের বেতন-ভাতাসহ সকল খরচ তিনটা বিষয়ের উপর তারা প্রাক্কলন করেছে।”
“টিকা কার্যক্রমের বিদ্যমান অবকাঠামো, জনবলের ব্যবহার এবং আউটরিচ কেন্দ্রের অনুপাত বিবেচনায় তারা প্রতি ডোজ টিকার ক্ষেত্রে পরিচালন ব্যয় ধরেছে ৭১ দশমিক ৪ টাকা থেকে ২২৪ দশমিক ৪ টাকা,” বলেন মি. জুলকারনাইন।
টিকা ক্রয় এবং দেবার ক্ষেত্রে সরকার যে হিসেব দিয়েছে সেখানে স্বচ্ছতার ঘাটতি আছে বলে উল্লেখ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান
তিনি বলেন, সরকার যেহেতু টিকা কার্যক্রমের খরচ নিয়ে বিস্তারিত এবং স্বচ্ছ হিসেব দেয়নি, সেজন্য তাদের নির্ভর করতে হয়েছে অন্যান্য নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন সূত্রের উপর।
“সে বিশ্লেষণ করে আমরা দেখতে পাই, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের যে কথা বলছেন তার তুলনায় বাস্তব ব্যয়, নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্য অনুযায়ী অর্ধেকের মতো হয়েছে।”
করোনাভাইরাস টিকার বুস্টার ডোজ যেভাবে পাওয়া যাবে
জন্মনিবন্ধন সনদের জটিলতায় ব্যাহত হচ্ছে টিকা কর্মসূচি
তিনি বলেন, এই ঘাটতি বাস্তবে হয়েছে কিনা সেটি তাদের জানা নেই। যেহেতু সরকার সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ করছে না বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে ১৪ হাজার কোটি টাকা থেকে সতের হাজার কোটি খরচ হয়েছে।
“এই তারতম্যের কারণ হচ্ছে, তথ্য প্রকাশে ঘাটতি এবং গোপনীয়তার সংস্কৃতি।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, কোন দুর্নীতি সুরক্ষা করার জন্য অবাধ তথ্য প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে কি না?
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো: মাইদুল ইসলাম প্রধান বলেন, চুক্তির শর্ত অনুয়ায়ী টিকা ক্রয়ের দাম প্রকাশ করা হয়নি।
” টিকা কেনার ক্ষেত্রে দামটা এমন থাকে যে প্রকাশ হয়ে গেলে এক দেশের সাথে আরেক দেশের দাম ভ্যারি (উঠানামা) করে। বিশেষ করে চায়নার সিনোফার্ম টিকা। তাদেরও একটা কন্ডিশন থাকে যে মূল্য প্রকাশ করা যাবে না,” বলেন মি. প্রধান।
টিআইবির গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৪৬ শতাংশ মানুষ টিকা গ্রহণে দ্বিধান্বিত ছিল। পঁচাত্তর শতাংশ মানুষ পরিবার-আত্মীয় স্বজনের এবং প্রতিবেশীর কাছ থেকে টিকা বিষয়ে জেনেছে।
ছেষট্টি শতাংশ টিকা গ্রহীতাকে টাকার বিনিময়ে দোকান থেকে নিবন্ধন করতে হয়েছে।