সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ঃ সাতক্ষীরায় চাঁদাবাজি ও মাদকসেবনের পৃথক দুটি অভিযোগে জেলা যুবদলের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর আইনুল ইসলাম নান্টাসহ তিন যুবদল নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার ভোর রাতে শহরের পুরাতন সাতক্ষীরাস্থ বাসা থেকে যুবদল নেতা ও পৌর কাউন্সিলর নান্টাকে এবং তালা উপজেলার মেলাবাজার ও রহিমাবাদের বাড়ি থেকে উপজেলা যুবদলের দুই নেতা মির্জা আতিয়ার রহমান ও সাঈদুর রহমান সাঈদকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে, কাউন্সিলর নান্টার মুক্তির দাবীতে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে মানবববন্ধন কর্মসুচি পালিত হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত যুবদল নেতারা হলেন, সাতক্ষীরা জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পুরাতন সাতক্ষীরা এলাকার বাসিন্দা আইনুল ইসলাম নান্টা (৫০), তালা উপজেলা যুবদলের আহবায়ক তালা সদরের মেলাবাজারের বাসিন্দা মির্জা আতিয়ার রহমান (৪৮) ও বহিস্কৃত যুগ্ন আহবায়ক তালার রহিমাবাদের বাসিন্দা সাঈদুর রহমান সাঈদ (৪০)।
সাতক্ষীরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিশ^জিৎ অধিকারী জানান, পুরাতন সাতক্ষীরা হাটখোলা মোড়ের ইমাদুল সরদারের ওষুদের ফার্মেসিতে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে নান্টা। চাঁদা না পেয়ে মঙ্গলবার রাতে ফার্মেসিতে হামলা চালিয়ে ইমাদুল সরদারকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে নান্টাসহ তার ক্যাডার বাহিনী। রাতেই ইমাদুলের ছেলে অহিদুজ্জামান বাদী হয়ে নান্টাসহ ৭ জনকে আসামী করে সদর থানায় মামলা করে। চাঁদাবাজির ওই মামলায় নান্টাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তবে, রাজার বাগান পূর্বপাড়া এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি পৌর আইন লঙ্ঘন করে ইমাদুল ইসলাম সরদার আমাদের জমির উপর ছাদের কার্নিস বাড়িয়ে দিলে আমরা সাতক্ষীরা পৌরসভায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে পৌরসভা তাদের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বলে। কিন্তু সে নির্দেশনা না মেনে কাজ অব্যাহত রাখে। স্থানীয় এলাকাবাসী এবিষয়ে প্রতিবাদ করলে ইমাদুল সরদার একটি মিথ্যা নাটক সাজিয়ে সদর থানায় আমি ও আমার পিতাসহ ৫ জন অসহায় ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এ মামলায় আমি জামিনে মুক্তি পেয়ে বাড়ি আসলে ইমাদুল আমিসহ গ্রামবাসীর বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে পুরো ঘটনা তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন ও মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে মানববন্ধন করি। এর পরপরই ইমাদুলের পরিবারের পক্ষ থেকে কাউন্সিলর নান্টার কাছে মিমাংসার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী গত মঙ্গলবার এক শালিসে বসে আমরা শালিস নামায় স্বাক্ষর করি। রাতে কাউন্সিলর নান্টা ওদের দোকানে স্বাক্ষর করতে গেলে তারা এতে স্বাক্ষর না করে উল্টো তাকে গালিগালাজ করে বের করে দেয়। এক পর্যায়ে তারা কাউন্সিলর নান্টার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে তাকে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করায়। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে পৌর কাউন্সিলর নান্টার মুক্তির দাবি জানান এবং ইমাদুল সরদারের হাত থেকে রেহাই পেতে পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এদিকে, কাউন্সিলর নান্টার মুক্তির দাবীতে পুরাতন সাতক্ষীরা হাট খোলার দোকান মালিকদের আয়োজনে বুধবার বিকালে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে একটি মানবববন্ধন কর্মসুচি পালিত হয়েছে। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরা সরকারী কলেজের সাবেক ভিপি আব্দুল কাদের, অসিম কুমার সাধু, বলয় চন্দ্র দে, রবিউল ইসলাম রবি প্রমুখ। বক্তারা এ সময় অবিলম্বে কাউন্সিলর নান্টার মুুক্তি ও মিথ্যা মামলা দায়েরর ঘটনায় জড়িত ইমাদুল সরদারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবী জানান।
অপরদিকে, তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জেহাদ ফকরুল আলম খান জানান, যুবদল নেতা মির্জা আতিয়ার রহমান ও সাঈদুরর হমান সাঈদের বিরুদ্ধে মাদক সেবনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। তাদের ফেন্সিডিল সেবনের একটি ভিডিও সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরালও হয়েছে। গভীর রাতে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মাদক সেবনরত অবস্থায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয। এছাড়া সরকারের বিরুদ্ধে নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
জেলা যুবদলের সভাপতি আবু জাহিদ ডাবলু জানান, মাদক সেবনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে সাঈদুর রহমান সাঈদকে কয়েক মাস আগে উপজেলা যুবদলের যুগ্ন-আহবায়কের পদ থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। মাদক সেবিদের স্থান যুবদলে নেই বলে জানান তিনি।