নিজস্ব প্রতিনিধি :
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও সাতক্ষীরা জামায়াতের আমীর উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুল বলেছেন,‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি’, ‘পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উভয় কক্ষের নির্বাচন’, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ’, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের জুলুম—নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা’ এবং ‘স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা’—এই ৫ দাবি গণমানুষের মুক্তির দাবি। এই ৫ দফা বাস্তবায়িত হলে মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
পিআর পদ্ধতিকে জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করে গণভোটের দাবিসহ ৫ দফা দাবিতে বুধবার ১৫ অক্টোবর সাতক্ষীরা খুলনারোড মোড় থেকে ইটাগাছা হাটের মোড় পর্যন্ত ২ কিলোমিটার সড়কজুড়ে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পৃথক চারটি স্থানে এ মানববন্ধ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। খুলনারোড মোড়ে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে নের্তৃত্বদেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী অধ্যাপক ওমর ফারুক। কোটসংলগ্ন সড়কে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে নেতৃৃত্বদেন সদর জামায়াতের সেক্রেটারী মাওলানা হাবিবুর রহমান, নিউমার্কেট মোড়ে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা আমীর উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুল ও তুফানমোড়ে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা সেক্রেটারী মাওলানা আজিজুর রহমানসহ জামায়াত নের্তৃবৃন্দ।
এ সময় জেলা সেক্রেটারী মাওলানা আজিজুর রহমান বলেন, হাজার হাজার মানুষ সড়কে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করার পরও যদি সরকারের কানে না যায়, সরকার যদি জনগণের চোখের ভাষা, মুখের ভাষা না বোঝে, তবে সরকার যেই ভাষা বুঝতে চায়Ñজনগণের দাবি আদায়ে সেই ভাষায় দাবি আদায় করা হবে। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী। কিন্তু সরকার যদি সড়ক অবরোধ চায়, সরকার যদি রাজপথ উত্তাল দেখতে চায়, তবে জামায়াতে ইসলামী ইচ্ছার বিরুদ্ধেও সেই কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবে।
জেলা সহকারী সেক্রেটারী অধ্যাপক ওমর ফারুক বলেন, জামায়াতে ইসলামী রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন চায়। জামায়াতে ইসলামী ব্যক্তি বা পরিবারতন্ত্রের রাজনীতি করে না; দলীয় স্বার্থের রাজনীতি করে না। জামায়াতে ইসলামী গণমানুষের কল্যাণে রাজনীতি করে। একটি দল ৫ আগস্ট পরবর্তী ক্ষমতায় না থেকেও নিজেদেরকে ক্ষমতাসীন মনে করে সারাদেশে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, লুটপাট ও দখলদারিত্ব শুরু করেছে। তাদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। ঐ দলটি কথায় বলে তারা সংস্কার চায়, কিন্তু ঐকমত্য কমিশনে বসলে নানা রকম টালবাহানা করে। দলীয় স্বার্থ হাসিলের জন্য তারা হাসিনা মার্কা প্রহসনের নির্বাচন চায়। মনে রাখতে হবে, এ দেশে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আর কোনো নির্বাচন হতে পারবে না। জনগণ এখন সজাগ ও সতর্ক রয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তরা বলেন, যারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চায় না, মেনে নিতে পারছে না— তারা যুক্তি দেখাচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হলে যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে জনগণ ভোটের প্রতি আস্থা হারাবে, যার প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়বে। গণভোটে সমস্যা কারা করবেÑপ্রশ্ন রেখে ডা. তাহের বলেন, এজন্যই তো জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হওয়া জরুরি। কারণ যারা সমস্যা সৃষ্টি করবে, তারা জনগণ ও সরকারের কাছে চিহ্নিত হবে। তাদেরকে চিহ্নিত করতে হলেও গণভোটকে জাতীয় নির্বাচনের টেস্ট ম্যাচ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, নভেম্বরের মধ্যে গণভোট এবং ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।
বক্তরা আরও বলেন, যারা গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একদিনে করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্য খারাপ। কারণ, গণভোটে জুলাই সনদ পাস হয়ে গেলে জাতীয় নির্বাচন ব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন আসবে। নতুন ব্যবস্থায় নির্বাচন হলে তারা ভোট চুরি করতে পারবে না, কেন্দ্র দখল করতে পারবে না। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি হয়ে গেলে তারা ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে পারবে না, একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। এ জন্য তারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ঠেকাতে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে।