সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের বারপোতা মসজিদে ইফতারির পর মাগরিবের নামাজ চলাকালীন সময়ে নামাজে বাঁধা দিয়েছেন এক হিন্দু যুবক। শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) ইফতারের পর নামাজ আদায়কালে এ ঘটনা ঘটে। মসজিদের মধ্যে নামাজ চলাকালীন ইমামকে টেনে তুলে বলতে থাকে, তোদের দিন শেষ আমাদের দিন শুরু, হরে কৃষ্ণ হরে রাম।
ওই হিন্দু যুবক অশোক সরদার (৪২) শিবপুর ইউনিয়নের বাঁশতলা গ্রামের বিজবার সরকারের ছেলে।
বারপোতা মসজিদের ঈমাম মাওলানা মোহাম্মদ আবু সাঈদ জানান, অনেক সুমল্লি সবাই রোজাদার। দ্বিতীয় রাকাতে বৈঠকে থাকা অবস্থায় একজন হিন্দু ধর্মের ভাই সামনে গিয়ে আমার দুই হাত ধরে টেনে তুলেছে। এরপর বলছে, তোমাদের আর সময় নাই। এরপর তাদের ধর্মের যে গানগুলো সেটা বলা শুরু করেছে। আমি মনে করি, এটা আমাদের মুসলমানদের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র। মুসলমান দেশ বাংলাদেশে মুসলমানরা হাঙ্গামা দাঙ্গা বাঁধিয়ে দিচ্ছে বলে আমাদের উপর দোষ দেয়। কিন্তু আজ আমি দেখলাম সম্পূর্ণ বিপরীত। নামাজে থাকাকালীন সময়ে এটা কিভাবে করার সাহস হয়। মসজিদে আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার বসা ছিলেন। আমার হাত ধরে তুলে বলে, হরে কৃষ্ণ হরে রাম এটা বলতে কিভাবে সাহস পায়।
ঘটনার সময় মসজিদে নামাজ আদায় করছিলেন পাশর্^বর্তী তেঁতুলতলা গ্রামের মোস্তফা গাইনের ছেলে রিয়াসাদ আলম। তিনি জানান, আমরা ইফতারি শেষ করে নামাজ শুরু করি। ফরজ নামাজের দুই রাকাত তখন শেষ পর্যায়ে। মসজিদে থাকা প্রায় ১০০ মুসল্লিরা সবাই নামাজের মনোযোগে ছিলেন। এমন মুহূর্তে একজন হিন্দু যুবক পাঁচ কাতার পেছন থেকে সামনে চলে যায়। সেখানে গিয়ে ঈমামের হাত টেনে ধরে তুলে বলছে, তোদের দিন শেষ আমাদের দিন শুরু- হরে কৃষ্ণ হরে রাম। মসজিদের ঈমামসহ মুসল্লিদের মাঝে তখন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ইউনিয়ন চেয়ারম্যানও তখন নামাজ পড়ছিল। পরে চেয়ারম্যান তাকে মসজিদ থেকে বাইরে নিয়ে আসে। পরে ওই হিন্দু যুবক অশোককে তার ভাই পরিতোষের হাতে তুলে দেন ইউপি চেয়ারম্যান।
মুসল্লি রিয়াসাদ আলম আরও বলেন, মসজিদের উত্তর পাশে একটি মন্দির রয়েছে। সেখানে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে পূজা চলছে। পূজার ওই অনুষ্ঠাণে ৫০০-৬০০ মানুষ ছিল।
বারপোতা গ্রামের আবুল হোসেন সরদারের ছেলে মুসল্লি সেলিম রেজা জানান, ঘটনার পর নতুন করে আবারও নামাজ আদায় করা হয়। নামাজ শেষে থানায় ঘটনাটি জানানো হলে সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ঘটনাস্থলে এসে সরেজমিন তদন্ত করে গেছেন।
শিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, নামাজের সময় বাঁধা দেয়। এরপরে তাকে পুলিশে দিয়েছে মুসল্লিরা। এ ব্যাপারে পরে কথা বলবো বলেই ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।
সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম কবির জানান, ধর্মীয় অনুর্ভতিতে আঘাত হানার দায়ে হিন্দু যুবক অশোক সরকারকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।