সাতক্ষীরা ট্রিবিউন ঃ আজ থেকে একবছর আগে ভারতের ডানকুনি হুগলী থেকে বাংলাদেশে আসার পথে নদীয়ার কৃষ্ণনগর হাঁসখালি থানা এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এর হাতে আটক হয়ে একটি শিশুহোমে বন্ধী রয়েছে সাতক্ষীরা শহরের ৫ নং ওয়ার্ডের পারকুখরালী গ্রামের ভ্যানচালক আজিবর রহমান ও মর্জিনা খাতুনের নাবালিকা কন্যা ছামিয়া (১৬)। সে ভারতের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর শিশু হোম রয়েছে বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন ছামিয়ার পিতা-মা। বিষয়টি মানবিক দৃষ্টি দিয়ে দেখার জন্য তারা বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। তারা বলেন আমরা আমার মেয়েকে ছাড়িয়ে আনার জন্য অনেকে চেস্টা করেছি অনেক লোকের কাছে গেছি এবং অনেক দৌড়াদৌড়ি করে ব্যর্থ হয়েছি এগুলো আমাদের ক্ষমতার অনেক বাইরে চলে গেছে। আমরা অনেক গরিব মানুষ। তারা ভিষণ আকুতি-মিনতী করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেছেন আপনি আমাদের শেষ ভরসা, আপনি আমাদের মেয়েকে বাঁচান। আমাদের মেয়ে ছামিয়াকে আপনি উদ্ধার করে আমাদের বুকে ফিরিয়ে দেন। বলছিলাম সাতক্ষীরা পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের পারকুখরালী এলাকার ভ্যানচালক আজিবর রহমান ও মর্জিনা খাতুনের সেজ মেয়ে ছামিয়ার কথা। ছামিয়ার মা-বাবা জানান আমার সেজ মেয়ে ছামিয়া বর্তমানে ভারতের নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগর শিশুহোমে বন্ধী রয়েছে। ঐ হোমে ছামিয়ার নাম লেখা হয়েছে ছামিন নামে। যার কেস নং ৬০৪৩২১। ছামিয়া খাতুনের জন্ম ২০ নভেম্বর ২০০৬ সে অনুযায়ী তার বর্তমান বয়স ১৬ বছর। সাতক্ষীরা পৌরসভা হতে প্রদানকৃত জন্মনিবন্ধন নং (২০০৬৮৭ ২৬৬০৫০০১০০৩১)। তারা দুজন জানান আমরা প্রায় ১০ বছর ধরে ভারতের হুগলী জেলার ডানকুনি থানার মনোহরপুর গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলামের বাড়ীতে ভাড়া থেকে বসবাস করতাম এবং সেখানে ভ্যান চালিয়ে, দিনমজুর কাজ ও শাকসবজি বিক্রি করে সংসার চালাতাম। আমাদের ৫ মেয়ে ১ ছেলে। মেঝ মেয়েকে ভারতেই বিয়ে দিয়েছি আর বড় মেয়েকে সাতক্ষীরার কলারোয়ায়। আর ছোট চার ছেলে মেয়েকে নিয়ে ঐ এলাকায় থাকতাম আমরা। কিন্তু হটাৎ বাংলাদেশে ছামিয়ার দাদির গুরুতর অসুস্থতার খবর পেয়ে দেশে ফেরার উদ্যোগ নেই। পাসপোর্ট না থাকায় ভারতীয় দালালের স্বরনাপর্ণ হই চুক্তি হয় ৫০ হাজার রুপির। চুক্তি অনুযায়ী দালাল আমাদের বাংলাদেশ বর্ডার পার করে দেবে সেজন্য তাকে আমরা ৪৯ হাজার রুপি দেই। দালালের কথা মতো পরিবারবর্গ নিয়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ মঙ্গলবার বাংলাদেশে ফেরার পথে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে ভারতের কৃষ্ণনগর থানার হাঁসখালি এলাকায় রাত ২.৩০ মিনিটের সময় আটক হই আমরা ৫ জন। আটক হওয়ার পরে বিএসএফ প্রথমে আমাদের সকলকে রামনগর থানায় নিয়ে যায়। এরপর আমাকে রানাঘাট থানায় এবং ছামিয়ার মা মর্জিনা খাতুন ও আমাদের দুজন শিশু সন্তানকে নিয়ে যাওয়া হয় কৃষ্ণনগর থানায় আর ছামিয়াকে বন্ধী করে রাখে ওখানেই। পুলিশ আমাদের কাছে থাকা ৭/৮ হাজার রুপির কাপড় চোপড় ও তিনটি মোবাইল ফোন নিয়ে নেয় যেটা ফেরত দেয়নি। যার মধ্যে দুটি স্মার্টফোন ছিল। পরদিন ১৫ সেপ্টেম্বর ছামিয়াকে আদালতের মাধ্যমে কৃষ্ণনগর সেভ হোমে পাঠানোর খবর পাই আমরে। তারপর ছয়মাস সেখানে জেল খাটানোর পর ১৪ মার্চ ২০২২ সোমবার স্বামী-স্ত্রীসহ আমাদের ছোট শিশুদেরকে ছেড়ে দেয় এবং একটি বিলের মধ্যে নিয়ে বলে তোমরা সোজা বাংলাদেশে চলে যাও নয়তো আবারও জেল খাটাবো বলে হুমকি দেয়। তখন ছামিয়া কোথায় জিজ্ঞাসা করলে তারা বলে তোমাদের মেয়ে নাবালক থাকায় ভারতীয় আদালত সেভ হোমে রেখেছেন তাকে কোন জেল দেওয়া হয়নি তোমরা দেশে চলে যাও।
ওকে ছাড়াতে হলে বাংলাদেশ সরকারের হাইকমিশন ও ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে আসতে হবে। আমাদের শত অনুরোধও শোনেনি তারা। তারপর আমাদের ছামিয়াকে ছাড়াই দেশে আসতে বাধ্য করে পুলিশ। এরপর আমরা ৪ জন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার তলুইগাছা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে চলে আসি কিন্তু ছামিয়াকে তারা ছাড়েনি আজও। ছামিয়ার মা মর্জিনা খাতুন বলেন আমি বাংলাদেশে আসার পর পাসপোর্টে দু’বার ভারতে যেয়ে মেয়ের সংগে দেখা করতে গেছি আমার মেয়ে খুবই কান্নাকাটি করছে সে দুবার আত্মহত্যা করতে গেছে। ছামিয়া বলছে আমাকে তোমরা বাঁচাও না হলে আমি মরে যাবো। এবিষয়ে আমি সেভহোমের ম্যাডামের সাথে অনেক অনুরোধ করেছি আমার মেয়েকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য কিন্তু তারা বলেছে বাংলাদেশী মন্ত্রী বা দুতাবাসের মাধ্যমে যোগাযোগ না করলে তাকে ছাড়বে না সেভহোম। এমতাবস্থায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ ও সদয় দৃষ্টি কামনা করেছেন চরম হতাশাগ্রস্ত ছামিয়ার অসহায় পিতা-মাতাসহ তাদের আত্মীয়স্বজনরা । ৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ সাল হতে আজও ওখানে বন্ধী রয়েছে ছামিয়া।
পূর্ববর্তী পোস্ট