তালা প্রতিনিধিঃ
তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নে ছকিনা বিবি নামের এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড অন্য ব্যক্তিকে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান ও মেম্বরের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ অন্যন্য কর্মকর্তাদের অবহিত করেছেন ভুক্তভোগী ছকিনা বেগমের পরিবার। ভুক্তভোগী ছকিনা বেগম (৮৯) তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়ের শাহজাতপুর গ্রামের শুকুর আলীর মেয়ে।
ছকিনা বেগম জানান, তার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড ছিলো। চারবার বয়স্ক ভাতার টাকা পেয়েছে। তবে হটাৎ তিনি জানতে পারেন তাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড মোখছেদ শেখ নামের এক ব্যক্তির নামে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে রোববার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে ছকিনার পরিবারের সদস্যরা তালা উপজেলা সমাজ সেবা অফিসে যায়। যেয়ে সকল বিষয় বলার পরে সমাজসেবা অফিসার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বর ওবাইদুর রহমান মিঠু কে অফিসে আসতে বলেন।
এ বিষয়ে খেশরা ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ওবাইদুর রহমান মিঠু বলেন, ছকিনা বিবিকে আগে চিনতাম না আজকে এই বিষয় নিয়ে নাড়াচাড়ার করার পরে চিনলাম। সমাজ সেবা অফিসের ম্যাডাম আমাকে ডেকেছিলো পরে আমি ইউনিয়ন পরিষদে এসে দেখি আমি যেটা করেছি সেটা সঠিক করেছি।
ছকিনা বিবি নামের বৃদ্ধা কি এখনো বেঁচে আছে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি এখনো বলতে পারবোনা তিনি বেঁচে আছে কি না।
খেশরা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম লাল্টু জানান, মেম্বররা সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কে মারা গেলো সে তথ্য যাচায় বাছায় শেষে স্বাক্ষর করে আমার কাছে আনলে আমি স্বাক্ষর করি। ২১ টি গ্রাম নিয়ে আমার ইউনিয়ন আমি তো সব লোককে চিনিনা। তাছাড়া যদি কারও নামে চলমান বয়স্ত ভাতার কার্ড থাকে তাহলে তাকে বাদ দিতে গেলে তার মৃত সনদপত্র লাগবে। কেউ মারা গেলে ইউনিয়ন পরিষদ রেজিষ্ট্রারে তার নাম লিপিবদ্ধ করা থাকে। ছকিনা বিবি বেঁচে আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে বেঁচে আছে কি না আমি জানিনা।
তালা উপজেলা সমাজ সেবা অধিদফতরের অফিসার সুমনা শারমিন জানান, খেশরা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম লাল্টু ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি রেগুলেশন জমা দিয়েছে যেখানে জীবিত ব্যক্তিকে মৃত বানানো হয়েছে। যে নাম্বর দিয়েছে তার নাম ছকিনা বিবি তিনি জীবিত আছেন তার সাথে কথা হয়েছে। তার পরিবারের সদস্যরা ভাতার বই নিয়ে অফিসে আসেন বোরবার দুপুরে । বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যকে ফোন করে অফিসে আসতে বলা হয়। কিছু সময় পরে ইউপি সদস্য কালো চশমা পরে আমার অফিসে ঢুকে আমাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, তিনি ইউএনও স্যারের কাছে প্রমাণ করবেন বিষয়টি সত্য এটা বলে সে চলে যায়। পরবর্তীতে বিষয়টি ইউএনও স্যার, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানকে জানানো হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান বলেছেন আগামী মঙ্গলবার মাসিক মিটিং চলাকালে বিষয়টি উপস্থাপন করতে।
তালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার জানান, ছকিনা বিবি বেঁচে আছে বিষয়টি সত্য। চেয়ারম্যান ও মেম্বর যোগসাজশ করে জীবিত ব্যক্তিতে মৃত বানিয়েছে। বিষয়টি আগামী মিটিং এ উপস্থাপন করা হবে এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও জানান, শুধু ছকিনা বিবির বিষয় নয়, চেয়ারম্যান ও মেম্বর দুজনে মিলে এমন অপরাধ প্রতিনিয়ত করছে। সরকারের একটি নিয়ম আছে ১০ টাকা কেজি দরের চাউলের কার্ড কর্তন করা যাবেনা। দেখা গেছে ওই মেম্বর তার ওয়ার্ড থেকে ৪০-৫০ জনের নাম কেটে দিয়েছে। যারা তাকে ভোট দেয়নি তাদের নাম কেটে দিয়েছে। যাদের নাম কেটেছে তারা অধিকাংশ সরকার দলীয় লোক।
তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রশান্ত কুমার বিষ্বাস জানান, ছকিনা বিবির বিষয়টি সমাজ সেবা অফিসার আমাকে ফোনে জানিয়েছেন। তবে আমি সারাদিন জেলাতে মিটিং এ ছিলাম তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারছিনা। তবে বিষয়টি জেনেছি সমাজ সেবা অফিসারের মাধ্যমে।