ষ্টাফ রিপোর্টারঃ
আশাশুনির ঘোলা ত্রিমোহনী খেয়াঘাটে জেলা পরিষদের ২০২২ সালের টোলরেট চার্টকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইচ্ছামত খেয়াঘাটের ইজারা গ্রহণকারী কর্তৃক মাত্রা অতিরিক্ত টোল আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ২০ বছর যাবত ঘাটে যে সকল মাঝি নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন তাদের কাছে ইজারাদার আব্দুর রহিম কর্তৃক মাত্রা অতিরিক্ত টাকা দাবী করায় মাঝিরা নৌকা চালানো বন্ধ করে দিয়েছে। যে কারনে আশাশুনি প্রতাপনগরের ২ পারের মানুষ ও শ্যামনগরের কাশিমারী ইউনিয়নের হাজার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। ৬ আগস্ট মঙ্গল সকাল ৯ টায় সাংবাদকর্মীরা সরেজমিনে যেয়ে এমন চিত্র দেখতে পান। মাত্রাতিরিক্ত টাকা দাবী করার কারনে নৌকা চালাতে না পারায় মাঝিরা তাদের পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। পারাপার যাত্রীরা জানান আগে ২৪ টা নৌকা চলতো সেখানে ৩ টা নৌকা চলছে। যে কারনে আগে ২০ মিনিটে পার হওয়া যেত এখন প্রাই এক ঘন্টা সময় লাগে। সাধারণ জনগন জানান,তাদের সময় নষ্ট হচ্ছে টাকাও কম নিচ্ছে না। এখন দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পরে নৌকা ঘাটে আসে।
ঘোলা ত্রিমোহনী খেয়াঘাটে পারাপারে জন্য যন্ত্রচালিতজন নৌকায় ১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়ে থাকলেও সেখানে জনপ্রতি ২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। মোটরসাইকেল প্রতিটি ১৫ টাকার স্থানে ৪০ টাকা, সাইকেল ৫ টাকা নেওয়ার কথা থালেও নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য জিনিস পারাপারের ক্ষেত্রে যে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে তার থেকেও তিন থেকে চার গুণ বেশি হারে টোল আদায় করা হচ্ছে।
অন্যদিকে মাঝি কওছার আলী,আবুল কালামসহ অনান্য মাঝিরা জানানা ইজারাদার আব্দুর রহিমের ঘাট পরিচালনাকারী আজিজুর রহমান আমাদের নৌকা হতে যাত্রী নামিয়ে তাদের লাল ফ্লাক টানানো নৌকায় যাত্রীদের উঠায়। ইজারাদাররা আগে ৩ টাকা নিতো এখন তারা ৫ টাকা দাবী করছে।তাহলে আমাদের কোন টাকা থাকছে না। তারা ঠিকই তাদের টাকা যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করছে আবার আমাদের কাছ থেকে নিচ্ছে। ভুক্তভোগীরা জানান তারা ২৯ বছর ধরে এই ঘাটে নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কিন্তু ইজারদার আমাদের পেটৈ লাথি মেরেছে। আমরা পরিবার নিয়ে কষ্টে জীবন যাপন করছি। আমরা জেলা পরিষদের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
সরেজমিনে দেখা আরো দেখা যায়,জেলা পরিষদের ইজারা পাওয়ার অন্যতম শর্ত হলো অপেক্ষামান যাত্রীদের জন্য বসার জায়গা তৈরি করা, জেলা পরিষদ কতৃক টোলরেটচার্ট দর্শনীয় স্থানে রাখা কিন্তু ইজারাদার ঘাটে কোন বসার ব্যবস্থা ও চার্টরেট দর্শনীয় স্থানে না টানিয়ে জেলা পরিষদের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলছে। তাছাড়া ইজারা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ টাকা প্রাপ্তি স্বীকার কোন রশিদও দিচ্ছেন না।
এবিষয় একই এলাকার ফারুক হোসেনসহ এলাকাবাসী জানান, ইজারাদার কর্তৃক মাঝিদের কাছে দাবীকৃত অতিরিক্ত না দেওয়ায় তাদের নৌকার যাত্রী ইজারাদার নিজেদের নৌকায় নামিয়ে নেই। ২১ জন মাঝি ও তার পরিবার খুব কষ্টে আছে। এমন কি ইজারাদার ছাত্রছাত্রীদের নিকট থেকেও টাকা নিচ্ছেন।
ঘোলা ত্রিমোহনী খেয়াঘাটের টোল আদায়ের দায়িত্বে থাকা আজিজুর রহমান জানান অতিরিক্ত কোন টোন আদায় হচ্ছে না। মাঝিরা আমাদের শর্ত মানছে না।
এদিকে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ ভ্যাট টাক্স বাদে খেয়াঘাট ২০২২ অর্থ বছরের জন্য ইজারা দিয়েছেন ১২ লক্ষ ১০ হাজার টাকায়। বছরে এই খেয়াঘাট থেকে ইজারা গ্রহণের টাকা বাদ দিয়ে ইজারা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ লাভ করছেন দ্বিগুন টাকা।
এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা খলিলুর রহমান জানান, শুনেছি ইজারাদার ও মাঝিদের মধ্যে টাকা নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত টোল পুনঃনির্ধারণ না করছে ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ সরকারি নির্ধারণকৃত টোলের বাইরে অতিরিক্ত টোল আদায় করতে পারবে না। সরকার নির্ধারিত টোলের বাইরে কোন ইজারাদার যদি অতিরিক্ত টোল আদায় করে তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
অতিরিক্ত টোল আদায়ের কারণে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছে পারাপার হওয়া যাত্রীসাধারণ। সেই সাথে ইজারা গ্রহণকারীর কঠিন শাস্তির চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন মাঝিসহ এলাকাবাসী।