নিজস্ব প্রতিবেদকঃ লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধার মাঝে বোরো ধানের বাম্পার ফলন কৃষকদের মাঝে আশার আলো জাগিয়েছে। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে লাখ ধান চাষি লবণসহিষ্ণু জাতের ধান চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে কৃষি উৎপাদন বৃিদ্ধর এক চমৎকার সম্ভাবনার দ্বার উন্মেচন করেছে তারা। যেসব লবনাক্ত ঘেরে আশানুরুপ মাছ হয় না সেই সব ঘেরে এখন দোল খাচ্ছে পাকা সোনালী ধান। কৃষকরা পরিকল্পিতভাবে ভূউপরিস্থ ও ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে সেচের এলাকা বাড়িয়ে অনাবাদি জমিতে বোরোর আবাদ করছে। উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, চট্টগ্রামও বরিশালে বিএআরআই’র আঞ্চলিক গবেষণা কেন্দ্র্রসমূহে লবণসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনে কৃষকদের মাঝে সাড়া ফেলেছে। বোরো ধানের ফলন বেড়েছে আগের যে কোন সয়ের চেয়ে বেশি। তবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে এসব অঞ্চলে বোরো ধানে নতুন নতুন রোগ দেখা দিচেছ। হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। এতে সর্বশান্ত হতে চলেছে কৃষকরা। তবে কৃষিবিদরা বলছে তারা কৃষকের পাশে থেকে সার্বিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
দেশের পাঁচ ভাগের একভাগ মানুষ বাস করে উপকূলীয় ১৪টি জেলায়। দেশের মোট আবাদি জমির প্রায় ৩০ শতাংশ জমি রয়েছে এ অঞ্চলে যার পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ হেক্টর। এ অঞ্চলের মানুষ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দারিদ্র্য, খাদ্য নিরাপত্তা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে টিকে বেঁচে থাকতে হয়। বিশেজ্ঞরা বলছে কৃষির অপর সম্ভবনা লুকিয়ে আছে উপকূলীয় অঞ্চলে। তাই এ অঞ্চলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনাকে বিবেচনা করে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির এক মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। সে মহাপরিকল্পনাতেও দক্ষিণাঞ্চলে উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনা ও বিশেষ কিছু কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন ফসলের ফলন পার্থক্য কমিয়ে বর্তমান উৎপাদন বৃদ্ধিও উপর জোর দেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, যদি উপকূলের এ কৃষি সম্ভাবনাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে কৃষি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে তা দেশের সামগ্রিক কৃষি উৎপাদনের চিত্রকে বদলে দেবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আকষ্মিক বন্যা ও লবণাক্ততা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান চাষ ব্যাহত হচ্ছে। নতুন করে যোগ হয়েছে ধানের শীষ নষ্ট হয়ে যাওয়া। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের কার্যকরী উপায় হচ্ছে লবণাক্ততা ও জলমগ্নতা সহিষ্ণু ধানের উন্নত জাত উদ্ভাবন বিনা’র ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. বাবুল আকতার, লবণাক্তপ্রবণ ভূমিতে কৃষি আবাদ উপযোগী জাত উদ্ভাবনের খুঁটিনাটি সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানান, ‘লবনাক্ত উপকূলীয় বিশাল পতিত ভূমিকে কৃষি আবাদের আওতায় আনতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউট বর্তমানে প্রায় ৩৭ প্রকার ফসল নিয়ে গবেষণা করছে। এরমধ্যে উদ্ভাবিত কয়েকটি লবনসহিষ্ণু ফসলের জাত কৃষক পর্যায়ে অবমুক্ত করা হয়েছে। তবে উপকূলীয় এলাকাতে গড় লবণাক্ততা এখন ১৫-২০ পার ডিসএস মিটার পর্যন্ত পৌঁছেছে। যে কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে কৃষি জমিতে উৎপাদান ধরে রাখতে আবো বেশি গবেষণা দরকার।
জমির মাত্রাতিরিক্ত লবলাক্ততা প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা জেলার লবনাক্তপ্রবণ কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াসিমলা গ্রামের আইপিএম ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কৃষক জাকির হোসেন জানান, বর্ষা না এলে লবণ অনেক বেড়ে যায়। লবণের জন্য আগে ওই এলাকার জমিতে কোনো ফসল ফলতো না। লবণসহিষ্ণু জাত পাওয়ার পর সেসব এলাকায় নতুন করে চাষাবাদ শুরু হয় ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে দেশে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৮ লাখ ৭৩ হাজার হেক্টর। সাতক্ষীরা খামার বাড়ি সূত্রে জানা গেছে, এবার ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে জেলায় বোরো ধানের চাষ হয়েছে।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, বিনা ধান-১০ একটি লবন সহিষ্ণু, উচ্চ ফলনশীল, আলোক অসংবেদনশীল ও উন্নত গুনাগুন সম্পন্ন বোরো ধানের জাত। দূর্যোগ প্রবণ সাতক্ষীরার উপকুলে বিনা ধান-১০ সফল চাষাবাদ কৃষকদের মাঝে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।