অনলাইন ডেস্ক ঃ
দেড় বছরের বেশি সময়েও কমেনি কোভিড-১৯ মহামারির দাপট। এই ভাইরাসে বিপর্যস্ত বিশ্ব। এখনও সম গতিতে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে করোনাভাইরাস। রোজ লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হওয়ার খবর আসছে। মৃত্যু বাড়তে বাড়লে লাশ স্তুপ জমছে। এই ধ্বংসযজ্ঞ আর কতদিন সেই প্রশ্ন সবার মনে মনে।
করোনাভাইরাস আগামী বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ভোগাবে বলে জানিয়েছেন ভারতের নারায়ণ ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সেসের প্রতিষ্ঠাতা ডা. দেবী শেঠি।
উপমহাদেশের বিশিষ্ট এই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ভারতের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে করোনাভাইরাস নিয়ে বিভিন্ন মতামত দেন।
তিনি বলেন, প্রথমেই বলে রাখি আমি এপিডেমোলজিস্ট নই বা ভাইরোলজিস্ট নই। মহামারির চরিত্র সম্পর্কে যেটুকু জ্ঞান রয়েছে, তার ভিত্তিতে বলছি যে, কোভিডের সংক্রমণ আপাতত চলবে। আগামী বছর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত তা কমবেশি ভোগাবে। সুতরাং সে ব্যাপারে এখন থেকেই মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হবে।
করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, করোনার তৃতীয় ঢেউ আসবেই কি না সে ব্যাপারে কেউ নিশ্চিত নন। মহামারি চরিত্র অনুযায়ী দ্বিতীয় ঢেউ সবসময়েই ভয়াবহ হয়। তৃতীয় ঢেউয়ের তীব্রতা কম থাকে।
তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় জানিয়ে দেবী শেঠি বলেন, তৃতীয় ঢেউ যদি আসে তা হলে সব থেকে আশঙ্কা ছোটদের নিয়ে। কারণ, ততদিনে বয়স্কদের টিকা নেওয়া হয়ে যাবে। অধিকাংশেরই ইমিউনিটি থাকবে। কিন্তু শিশুদের টিকাগ্রহণ তখনো হবে না। ফলে তাদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে বেশি। তাই এখন থেকেই জোর দিতে হবে কমবয়সী বাবা-মায়ের টিকা নেয়া জরুরি।
তিনি যোগ করেন, বয়স্ক মানুষ কোভিড আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে সমস্যা কম। কেউ যদি অক্সিজেন বেড বা আইসিইউ বেডে থাকেন তা হলে চব্বিশ ঘণ্টা অ্যাটেন্ডেন্ট লাগে না। কিন্তু কোনো কোভিড আক্রান্ত শিশু অক্সিজেন বেডে বা আইসিইউতে থাকলে সে সব সময়ে তার বাবা-বা মাকে পাশে চাইবে।
দেবী শেঠি আরও বলেন, আমার সারাটা জীবন আমি পেডিয়াট্রিক আইসিইউ বানাতে লাগিয়ে দিয়েছি। হার্ট সার্জারির পর শিশুদের দেখভালের জন্য তা জরুরি। তাই শিশুরা কোভিড আক্রান্ত হয়ে অক্সিজেন বেড বা আইসিইউ বেডে থাকলে কী বায়না করতে পারে, আমার থেকে ভালো কেউ জানে না। তাই ততদিনে তার বাবা বা মায়ের টিকাগ্রহণ হয়ে যাওয়া উচিত। যাতে আইসিইউতে তারা সন্তানের পাশে থাকতে পারেন।
সাক্ষাৎকারে ডাক্তার দেবী শেঠি ভারতের ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে বলেছেন, তৃতীয় ঢেউ এলে আরও কয়েক লাখ ডাক্তার, নার্স ও প্যারামেডিক লাগবে। একটা বিষয় বুঝতে হবে—গত এক বছর ধরে কোভিড সামলাতে সামলাতে ডাক্তার-নার্সদের একটা বড় অংশ ক্লান্ত। আবারও বলছি বয়স্ক রোগীদের সামলাতে তাদের অতটা বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু তৃতীয় ঢেউ যদি আসে তা হলে শিশুরা আক্রান্ত হবে। তখন এই ক্লান্ত ওয়ার্কফোর্স দিয়ে তাদের সামলানো যাবে না।
করোনা থেকে বাঁচত টিকা নেওয়ার ওপরই জোর দিয়েছেন ডাক্তার শেঠি।
তিনি বলেন, ভ্যাকসিনের আর ট্রায়াল দরকার নেই। লক্ষ লক্ষ মানুষ ভ্যাকসিন নিয়ে ফেলেছেন। শুধু দরকার উৎপাদন বাড়ানো। এ জন্য দেশ বিদেশের সব ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থার সঙ্গে এখনই কথা বলতে হবে। টাকা আগাম পেলে সবাই ভ্যাকসিন বানাতে রাজি হবে। আশা করি সমস্যা হবে না।
প্রসঙ্গত, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ভারত। দেশটিতে রোজ ৩ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। মারা যাচ্ছেন ৩ হাজারের বেশি।