নিজস্ব প্রতিনিধি: দেবহাটার কুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান বর্ষিয়ান আওয়ামী লীগ নেতা আছাদুল হক ও পরাজিত আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসাদুল ইসলামের সমর্থকদের মধ্যে মারপিটের ঘটনায় দুপক্ষের চারজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। বুধবার সকাল ১০টার দিকে ইউনিয়নের দেউকুল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে নির্বাচিত আছাদুল হকের সমর্থকরা হলেন দেউকুল গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে শফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী আলেয়া খাতুন। অপরদিকে পরাজিত আসাদুল ইসলামের সমর্থকদের মধ্যে আহত হয়েছেন একই গ্রামের নজরুলের স্ত্রী অছিরণ বিবি ও ছেলে দেলোয়ার। আহতদের মধ্যে আছাদুল হকের সমর্থক শফিকুল ও আলেয়া খাতুনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদেরকে হতুড়িপেটা এবং লাঠিশোঠা ও ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছে বলে দাবি পরিবারের। গুরুতর আহতবস্থায় প্রথমে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে উভয়ের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাদেরকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন শফিকুল ও তার স্ত্রী।
আহত শফিকুলের মেয়ে শরিফা জানান, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তারা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও ওই ইউনিয়নের ২৮ বছরের চেয়ারম্যান আছাদুল হকের ঘোড়া প্রতীকের পক্ষে কাজ করেন। ফলে সেখানকার পরাজিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আসাদুল ইসলামের নেতৃত্বে নির্বাচনের আগেই তাদের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও তার বাবা-মাকে মারপিট করে নৌকার সমর্থকরা। এঘটনায় গনমাধ্যমের সামনে মুখ খোলেন তার বাবা-মা। তার পরদিন নৌকার প্রার্থী আসাদুল ইসলামের কথামতো কয়েকজন সাংবাদিক সেখানে গিয়ে লাইভে বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিতের চেষ্টা করেন। সেসময় একটি পত্রিকার লাইভ চলাকালে দেউকুলের নজরুলের ছেলে ও নৌকার প্রার্থী আসাদুল ইসলামের সমর্থক দেলোয়ার শফিকুলের স্ত্রী আলেয়াকে দুঃশ্চরিত্রা বলে মন্তব্য করেন। এরইমধ্যে নির্বাচনে জয়লাভ করেন বর্ষিয়ান আওয়ামী লীগ নেতা আছাদুল হক। বুধবার সকালে আলেয়া তাকে লাইভ ভিডিওতে দুঃশ্চরিত্রা বলার কারন জানতে চান দেলোয়ারের কাছে। এসময় কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে আসাদুল ইসলামের সমর্থক দেলোয়ার, নূর আলী বিশ্বাসের ছেলে রকিব বিশ্বাস, নজরুল মিস্ত্রির ছেলে নাজমুল মিস্ত্রি, হেলাল উদ্দীন বিশ্বাসের ছেলে শওকত হোসেন, রকিব বিশ্বাসের তিন ছেলে আব্দুর রহমান, বাবু, আরমান, শফি সরদারের ছেলে আল আমিনসহ তাদের বাড়ির মহিলারা রাস্তার ওপর ফেলে শফিকুলে স্ত্রী আলেয়াকে লাঠিশোঠা দিয়ে মারপিট শুরু করে। একপর্যায়ে দেলোয়ার পাশ্ববর্তী তার শ্বশুর বাড়ি থেকে হাতুড়ি ও ইট এনে আলেয়ার মাথায় পরপর কয়েকটি আঘাত করে। এসময় আলেয়ার স্বামী শফিকুল তাকে বাঁচাতে গেলে তাকেও হাতুড়িপেটা করে হামলাকারীরা। পরবর্তীতে অচেতন অবস্থায় তাদের দুজনকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা। কিন্তু অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখান থেকে তাদেরকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে কর্তব্যরত চিকিৎসক। খবর পেয়ে দেবহাটা থানার পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। একইসাথে নির্বাচন পরবর্তী এধরনের সংঘর্ষে না জড়ানোর জন্যও সকলের প্রতি আহবান জানান পুলিশ সদস্যরা।
স্থানীয়রা বলেন, দেউকুলের ওই মারপিটের ঘটনায় পুষ্পকাটির মতো একটি নাটকীয় ঘটনা সাজাতে চেয়েছিল দেলোয়ারসহ অন্যান্য হামলাকারীরা। সেজন্য তারা আছাদুল হকের সমর্থক শফিকুল ও আলেয়াকে মারপিটের পর রাস্তায় ফেলে রেখে নিজেদের বাড়িতে গিয়ে নিজেরা ভাংচুর করেন এবং আহত হওয়ার ভান ধরেছেন। মারপিটের দুঘন্টা পর বেলা ১২টার দিকে তারা গিয়ে হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছেন বলে জানান স্থানীয়রা।
অপরদিকে আসাদুল ইসলামের সমর্থকরা জানান, শফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী আলেয়া লোকজন নিয়ে দেলোয়ারসহ অন্যদের ওপর হামলা চালায় এবং তাদের বাড়ি ভাংচুর করে। এতে দেলোয়ারসহ দুজন আহত হয়েছেন বলেও দাবী করেন তারা।
এব্যাপারে দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ ওবায়দুল্লাহ বলেন, মারপিটের খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। পুলিশের পক্ষ থেকে চিকিৎসাধীন আহতদের খোঁজখবর নেয়া হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান ওসি।
পূর্ববর্তী পোস্ট