নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার জবরদখলকৃত খলিশাখালী নামীয় ৪৩৯.২০ একর (১,৩২০ বিঘা) ব্যাক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে ৭ দিনের মধ্যে অবৈধ দখলদার ও ভূমিদস্যুদের জমি ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। একইসাথে জমি ছেড়ে না দিলে জেলা ভূ-সম্পত্তি জবরদখল ও পুনরূদ্ধার সংক্রান্ত নভেম্বর-২১ মাসের সভার সিদ্ধান্তক্রমে খলিশাখালীতে অবস্থানরত সন্ত্রাসী বাহিনী, অবৈধ দখলদার ও ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে উল্লেখ করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিংয়ের মাধ্যমে গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে। রোববার দুপুর থেকে খলিশাখালীসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রশাসনের গণবিজ্ঞপ্তিটি মাইকিং করে প্রচার করা হয়। এদিকে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে খলিশাখালী এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের ওই জারিকৃত গণবিজ্ঞপ্তি প্রচারকালে খলিশাখালীর জমি জবরদখলের মুল হোতা ইছাদ আলীর ছেলে আনারুল ইসলাম ও শাহজান গাজীর ছেলে রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে ভূমিদস্যু গোলাপ ঢালী, মোহর আলীর ছেলে ইছাদ আলী ও জামাত আলী, বাক্কারের ছেলে সাইফুল, রফিকুল, জাল করিম ওরফে করিম পাড়ের ছেলে আরিফ পাড়, আবুল গাজীর ছেলে রিপন ও রাজু, ওমর ফকিরের ছেলে শরিফুল ফকির ও শহিদুল ফকির, আসাদুল, সুণীল স্বর্ণকারসহ সেখানে অবস্থানরত ভূমিদস্যু ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা উপজেলা প্রশাসনের প্রচার মাইক ও ভ্যান ভাংচুর করে। ভাংচুরকালে তারা গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার ভ্যানের চালক কামটা গ্রামের বৃদ্ধ সালেক (৬০) কে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারপিটও করে।
হামলার শিকার ভ্যান চালক বৃদ্ধ সালেক জানান, পারুলিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে মোটর ভ্যানে মাইকিংয়ের মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনের গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করতে করতে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে চালতেতলা হয়ে খলিশাখালীর রাস্তা ধরে যাচ্ছিলেন তিনি। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ প্রচার করতে না করতেই খলিশাখালীর জমি জবরদখলের মুল হোতা আনারুল ও রবিউলের নেতৃত্বে কিছু ভূমিদস্যু ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তার প্রচার ভ্যানের গতিরোধ করে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে তিনি গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করছেন বলার সাথে সাথে অস্ত্রধারী ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীরা তাকে জিম্মি করে মারপিট এবং গণবিজ্ঞপ্তি প্রচারের মাইক ও মোটর ভ্যান ভাংচুর করে। এসময় উপজেলা প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ অস্ত্র উঁচিয়ে আষ্ফালন করতে থাকে সেখানে অবস্থানরত ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীরা। একপর্যায়ে ভ্যানচালক সালেক বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করলে আহতবস্থায় তাকেসহ ভাংচুরকৃত প্রচার মাইক, মোটরভ্যান ফেলে রেখে চলে যায় হামলাকারীরা।
সরকারি কাজে বাঁধা সৃষ্টির এঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী ও দেবহাটা থানার ওসি শেখ ওবায়দুল্লাহ।
উল্লেখ্য, গেল বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ভোররাতে ভূমিদস্যু বাহিনী প্রধান আনারুল ও রবিউলের নেতৃত্বে মুহুর্মুহু গুলি ও বোমা বর্ষণের মধ্যদিয়ে আতংক সৃষ্টি করে খলিশাখালী নামীয় ব্যাক্তি মালিকানাধীন ওই ১,৩২০ বিঘা জমি ও মৎস্য ঘের জবরদখল ও লুট করে নেয় ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীরা। জবরদখলের পিছনে থাকা ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদদাতাদের কথামতো বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন এবং প্রশাসনকে বোকা বানাতে রাতারাতি সেখানে তুলে দেয়া হয় ‘মুজিবনগর ভূমিহীন আবাসন কেন্দ্র’ নামের একটি সাইনবোর্ড। দখলদারিত্বে নের্তৃত্বসহ খলিশাখালীতে অবস্থানরত ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের অধিকাংশরাই বিএনপি ও জামায়তের সক্রিয় নেতা-কর্মী। ভূমিদস্যু আনারুল ও রবিউলের নেতৃত্বে কয়েকশ ভূমিদস্যু ছাড়াও বর্তমানে খলিশাখালীতে অবস্থান করছে কয়েক ডজন মামলার আসামী কুখ্যাত আকরাম ডাকাতের নেতৃত্বাধীন আকরাম বাহিনী, স্থানীয় ইউপি সদস্যের একটি বাহিনী, গফুর মাস্তানের বাহিনী, মুর্শিদ ও শাহিনুরের বাহিনী এবং অহিদুল ও মনি’র নেতৃত্বাধীন বাহিনীসহ অন্তত হাফডজন অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনীর শতাধিক অপরাধী। দেবহাটা উপজেলা পরিষদের একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, জেলা ও উপজেলার ২/৩ জন ভুইফোঁড় অনলাইন মিডিয়ার কথিত সাংবাদিক সহ বেশ কিছু মদদদাতা রয়েছে খলিশাখালীর সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের। জবরদখল পরবর্তী গত ৪ মাসে অবৈধভাবে খলিশাখালীর মৎস্য ঘের গুলোর মাছ লুট, কথিত ভূমিহীনদের কাছে জমি বেঁচাকেনা, হাতবদল ও চাঁদাবাজি করে প্রায় অন্তত ২কোটি ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে খলিশাখালীর ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসী বাহিনীর মুল নেতৃত্বে থাকা আনারুল ও রবিউলসহ তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদদাতারা। সম্প্রতি খলিশাখালী দখলমুক্ত করতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন নড়েচড়ে বসায় অবৈধ দখলদার ও তাদের মদদদাতাদের রীতিমতো গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। খলিশাখালীতে প্রশাসনের উচ্ছেদাভিযান ঠেকাতে প্রতিনিয়ত ভারত থেকে অবৈধ অস্ত্র ও রাত জেগে পাহারা দিতে ইয়াবা’র চালান ঢুকানো হচ্ছে সেখানে। পাশাপাশি উচ্ছেদাভিযান ঠেকানোর কোটি টাকার এ মিশনে হাইকোর্টে ছুটোছুটিসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের অফিসারদের বদলীর তদবির নিয়ে একাধিক মন্ত্রনালয়, প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ অফিসার ও যুবলীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছে ভূমিদস্যু বাহিনী প্রধান আনারুল ও রবিউলসহ তাদের মদদদাতারা। শেষমেষ সে প্রচেষ্টা ব্যার্থ হওয়ায় প্রশাসনকে ভীতসন্ত্রস্ত করতে রোববার গণবিজ্ঞপ্তির প্রচারকালে হামলা চালায় খলিশাখালীর ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীরা। খলিশাখালীর একটি সূত্র জানায়, ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশের পর মদদদাতাদের মধ্যে অন্যতম উপজেলা পরিষদের সেই জনপ্রতিনিধি তার পুরষ্কারের ২০বিঘা জমি আর নিতে চাইছেননা। মুখোশ উন্মোচনের ভয়ে এখন জমির পরিবর্তে নগদ টাকা নিয়ে গাঁ বাচিয়ে সব ছেড়েছুড়ে উঠতে চাইছেন তিনি। সেজন্য রোববার পর্যন্ত ওই জনপ্রতিনিধি ১০ লাখ টাকা দাবী করেছেন ভূমিদস্যুদের কাছে।
পূর্ববর্তী পোস্ট