নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সাতক্ষীরার তালা উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের নেতৃত্বে কলেজছাত্রকে টর্চার সেলে বিবস্ত্র করে মারধর ও ভিডিও ধারণ করে চাঁদা দাবির ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সোমবার (২৫ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান আশিক ও সাধারণ সম্পাদক সুমন হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি ও সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে তালা উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ আকিবকে সাময়িক বহিষ্কার ও স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ করা হলো।
সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান আশিক জানান, তালা উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ আকিবকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো। তাকে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তির অপরাধের দায়ভার সংগঠন নেবে না।
নির্যাতনের শিকার কলেজছাত্র শোয়েব আজিজ তন্ময় তালা সদরের জাতপুর গ্রামের নার্সারি ব্যবসায়ী শেখ আজিজুর রহমানের ছেলে। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ আকিব তালার মাঝিয়াড়া গ্রামের সৈয়দ ইদ্রিসের ছেলে।
রোববার (২৪ এপ্রিল) দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টানা ৫ ঘণ্টা তালা সরকারি কলেজের একটি কক্ষে টর্চার সেলে বেঁধে নির্যাতন করা হয় ওই কলেজছাত্রকে। ছেলেকে উদ্ধার করে তালা হাসপাতালে ভর্তির পর রাতেই অভিযুক্ত পাঁচ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের ৭-৮ জনকে আসামি করে তালা থানায় মামলা করেন নির্যাতনের শিকার কলেজছাত্রের বাবা আজিজুর রহমান। অভিযোগ উঠেছে, সেখানেই তাকে মামলা না দিতে হুমকি দিতে থাকেন প্রধান অভিযুক্ত সৈয়দ আকিবের বাবা সৈয়দ ইদ্রিস। তিনি প্রভাব বিস্তার করে মামলাটি নথিভুক্ত করতে দেননি পুলিশকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ আকিব মাদকাসক্ত। আগেও কয়েকবার পুলিশের কাছে আটক হলেও প্রভাব বিস্তার করে তাকে ছাড়িয়ে নেয় পরিবার। বর্তমানে তালা সরকারি কলেজের একটি কক্ষে কিশোর গ্যাং সদস্যদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন টর্চার সেল।
এদিকে তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) আবুল কালাম আজাদের নানা নাটকীয়তার পর সোমবার (২৫ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ সুপার মোহম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের হস্তক্ষেপে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাসহ চার ছাত্রলীগ কর্মী ও এক স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতার বিরুদ্ধে থানায় মামলাটি নথিভুক্ত হয়। মামলা নম্বর ২০। মামলাটি নথিভুক্ত করা হয় ১৪৩/৩৪২/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৩৮৫/৩৭৯ ও ৫০৬ ধারায়।
তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আবুল কালাম বলেন, মামলাটি নথিভুক্ত হওয়ার পর আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। আসামিরা পলাতক রয়েছে।
এ ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিষয়টি খুব দুঃখজনক। যেহেতু মামলা হয়েছে ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করছি। নিরপরাধ কেউ যেন ভুক্তভোগী না হয় সেটাও খেয়াল রাখতে হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।