আবু সাঈদ সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় ৭০টি কেন্দ্রে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে চললেও বাস্তবে কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে না থাকার মত অবস্থা। অভিযোগ, কথিত রিসোর্স পার্সন, ট্রেইনার, কর্মকর্তা নিয়োগ ও সাসের অন্য প্রকল্পের স্টাফদের দিয়ে মাস্টার রোলে ভুয়া স্বাক্ষর দেখিয়ে প্রকল্পের সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করা হচ্ছে। সমগ্র সাতক্ষীরা জেলায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থী মাত্র এক হাজার ৩০০ জন থাকলেও কাগজে কলামে কেন্দ্রগুলোতে শিক্ষার্থী রয়েছে ১২ হাজার ৬ শত। সাতক্ষীরা জেলা উপ আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এডিপি’র অর্থায়নে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ১১ থেকে ৪৫ বছরের মহিলা ও পুরুষের জন্য ‘মানব উন্নয়নের জন্য সাক্ষরতা উত্তর ও অব্যাহত শিক্ষা প্রকল্প-৪ কার্যক্রম’ বাস্তবায়নে সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থা (সাস) অনুমতি পায়। ৪ বছর মেয়াদী এই প্রকল্পের শুরুতেই ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ৪২ মাসের প্রকল্প শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের ২২ মাস পরে। প্রকল্পের শুরুতেই কেন্দ্র নির্মাণ, আসবাবপত্র ও উপকরণ সরবরাহের জন্য বহুল প্রচারিত পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করার কথা থাকলেও নামসর্বস্ব একটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখিয়ে নিম্নমানের ঘর নির্মাণ ও উপকরণ সামগ্রী অফিস রেজুলেশনের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করেন সাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। গত শনিবার শেষ হওয়া সাস কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ট্রেইনার ও সুপারভাইজারদের প্রশিক্ষণে ভাতা বাবদ ছয় হাজার টাকা করে উপস্থিতি খাতায় স্বাক্ষর করালেও তাদেরকে দেয়া হয়েছে মাত্র ৪ হাজার টাকা। এনিয়ে খোদ কর্মীদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সব মিলিয়ে সরকারের ২২ কোটি ৪৪ লাখ টাকার শিক্ষা প্রকল্পের আসল উদ্দেশ্যে ভেস্তে যেতে বসেছে শুধু তাই নয়,সাস এনজিও কর্মীদের এই স্কুল প্রজেক্টের মধ্যে নাম দিয়ে অর্থাৎ একব্যাক্তি দুই প্রকল্পের টাকা ভুয়া বিলভাউচার এর মাধ্যমে তুলে নিচ্ছে যাহা একাধিক মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি। উল্লেখ্য সাতক্ষীরা জেলায় ৪ শত ২০ টি স্কুল থাকার কথা থাকলেও কিছু কিছু স্কুল বন্ধ নতুবা শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক নেই। আবার অধিকাংশ বাচ্চা প্রাইমারি সহ অন্যান্য স্কুলে যায় তাদের দুই শিক্ষা প্রতিষ্টানে প্রতিদিন হাজিরা খাতায় উপস্থিত দেখানো হয় যেটা আজব ব্যাপার। শুধু এখানে শেষ নয় খোঁজ নিয়ে জানাযায় অধিক অংশ স্কুলে শিক্ষার্থী খুব কম আসে কিন্তু প্রতিদিন ২৮ থেকে ৩০ জন বাচ্চাদের হাজিরা খাতায় উপস্থিত দেখানো হয় যেটা স্কুলে গেলে বাস্তবে দেখা যাবে। সরকারের এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া শেখানোর পাশাপাশি তাদের কারিগরিসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া। এতে প্রতিদিন বিকেল ও সন্ধ্যায় দুটি শিফটে ৩০ জন করে মোট ৬০ জন শিক্ষার্থী থাকার কথা রয়েছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৯ মাসের কোর্স সম্পন্ন করার কথা থাকলেও বাস্তবে সেই প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে না। প্রতিটি কেন্দ্রে সপ্তাহে চার দিন প্রশিক্ষণ ও দুই দিন মৌলিক শিক্ষার ক্লাস হওয়ার কথা। এজন্যে প্রতি কেন্দ্রে দু’জন করে প্রশিক্ষক ও দু’জন করে সহায়ক-সহায়িকা রয়েছে। এদের মধ্যে প্রশিক্ষকরা ক্লাসপ্রতি ২০০ টাকা এবং সহায়ক-সহায়িকারা পাবেন প্রায় ১৭৫ টাকা। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে একেকজন প্রশিক্ষক ৩ হাজার ২০০ এবং সহায়ক-সহায়িকারা পাবেন ১৩ থেকে ১৪০০’ টাকা। অথচ প্রশিক্ষকদের প্রতি মাসে দেয়া হচ্ছে ১৬০০ টাকা এবং সহায়ক-সহায়িকাদের ১১০০ থেকে ১৩০০ টাকা। এতে প্রশিক্ষক ও সহায়ক-সহায়িকাদের দেখিয়ে প্রতি মাসে লুটপাট করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এছাড়া প্রতি শিফটে প্রশিক্ষণ উপকরণ বাবদ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫ হাজার ৭০০ টাকা। যা দিয়ে নামমাত্র উপকরণ কিনে সর্বস্ব লুটপাট করা হয়েছে। আবার অনেক কেন্দ্রে আদৌ উপকরণ দেয়া হয়নি। আর দেয়া হলেও তা এক শিফটের জন্য।তালার ভায়ড়া, বারুইহাটি, চরগ্রাম, আটারই, খাজরা, নলতা, ধুলান্ডা, বাগমারা, ধানদিয়া, কাটাখালি গ্রামের কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা যায়, সেখানে কোন শিক্ষার্থী নেই, নেই কোন প্রশিক্ষক ও সয়ায়ক-সহায়িকা, পড়ে আছে পরিত্যক্ত ঘর।ফারুক হোসেন, রফিকুল ইসলাম, আবু জায়র, আব্দুর রহমানসহ কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, কাগজে-কলমে ছাত্রছাত্রী দেখালেও কোনদিন কেন্দ্রে ১০-১৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী আসে না। এছাড়া প্রায় দিনই কেন্দ্রগুলোতে কোন ক্লাস হয় না, কোন শিক্ষার্থী আসেনা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীদের এখানে ভর্তি করা হয়েছে। সরকারের টাকাগুলো লুটপাট ছাড়া কোন কাজ হচ্ছে না। এ অবস্থা শুধু তালা উপজেলায় নয়, সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া, দেবহাটা, কালিগঞ্জ উপজেলায়ও।অভিভাবক সাবান আলী, রহিমা খাতুন, মোবরেক গাজী জানান, ভর্তির সময় তাদের বাচ্চাদের অনেক কিছু দেয়ার আশ্বাস দেয় সাস কর্মকর্তারা। কিন্তু শুধু বই আর খাতা দিয়েছে। কোন কাপড়-চোপড় কিংবা ব্যাগ এখনও তারা দেয়নি, প্রজেক্ট জেলা ম্যানেজার কামরুল বলেন, ভাই আপনারা এমন লেখা লিখেননা যাতে কয়েক শত পরিবারের ক্ষতি হয়, তবে সামান্য কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে। অফিস যেভাবে বলে আমরা সেটাই করে থাকি। এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিশ্চিক একধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা বলেন আমার বক্তব্য কথা পত্রিকার আসলে চাকরী চলে যাবে। তখন কিভাবে সংসার চালাবো।’তালা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিদ্যালয় কার্যক্রম চলবে। বিষয়টি যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। কোন রকম অসংগতির প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।সাতক্ষীরা জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো’র উপ-পরিচালক হিরামন কুমার বিশ্বাস জানান, ‘একজনের পক্ষে সকল জায়গায় যাওয়া সম্ভব হয় না। তাছাড়া যারা ঝরে পড়েছে কিংবা কোনদিন স্কুলে যায়নি তাদের শিক্ষাদান করা খুবই কঠিন। এবিষয়ে জেলা ম্যানেজার কামরুল ইসলামের খোঁজ খবর নিয়ে ব্যাবস্তা নিতে বলেন হিরামন কুমার কিন্তু প্রজেক্টের সকল অনিয়ম সহ শিক্ষকদের বেতন ও ঘর ভাড়ার টাকা কৌশলে কমদিয়ে উৎবিত্ত টাকা কামরুলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দূর্নিতীবাজদের মাঝে ভাগ বাটোয়ারা হয় বলে কয়েকজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন।