নিজস্ব প্রতিনিধি : ঘূর্নিঝড় ইয়াসের প্রভাবে দেবহাটার সীমান্তবর্তী ইছামতি নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। বুধবার সকাল থেকে থেমে থেমে গুড়িগুড়ি বৃষ্টির সাথে বাড়তে থাকে ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ইছামতি নদীর পানির স্তর। বেলা ১২টা থেকে দুপুর প্রায় ২টা পর্যন্ত ভরা জোয়ারে স্বাভাবিকের তুলনায় অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পায় নদীর পানি। একপর্যায়ে দেবহাটার পারুলিয়া ইউনিয়নের কোমরপুর, সদর ইউনিয়নের ভাতশালা, চরশ্রীপুর, টাউন শ্রীপুর, সুশীলগাতী, বসন্তপুর ও নওয়াপাড়া ইউনিয়নের নাংলা, ছুটিপুরসহ সীমান্তবর্তী অন্যান্য এলাকার জরাজীর্ন ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধ টপকে এবং কয়েকটি স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়ে প্রবল বেগে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে জনপদে। এতে করে ঘরবাড়ীতে পানি প্রবেশ করায় এবং আশপাশের মৎস্য ঘের পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েন বেড়িবাঁধের বাইরে নদীর পাশে এবং বেড়িবাঁধের অদূরে বিভিন্ন জনপদে বসবাসরত পরিবারের মানুষরা।
ক্রমশ বেড়িবাঁধ টপকে জনপদে নদীর লোনাপানি প্রবেশের মাত্রা বাড়তে থাকায় ইছামতির জরাজীর্ন ও টলমলে বেড়িবাঁধ নিয়ে আতংঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে থাকে সীমান্ত পাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে। পরবর্তীতে দুপুর দুইটার পর ভাটির টানে নদীর পানি কমতে শুরু করলে স্বেচ্ছাশ্রমে ভাঙন কবলিত এলাকা মেরামত এবং বালু ও ইট ভর্তি বস্তা, জিও ব্যাগ ফেলে নদীর বাঁধ রক্ষার কাজ শুরু করেন স্ব স্ব এলাকার মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত এসব এলাকা পরিদর্শনকালে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমা আক্তার, উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মুজিবর রহমানসহ উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বাঁধ রক্ষায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে এলাকাবাসীকে আশ্বস্থ করেন।
ইছামতি নদীপাড়ের একাধিক বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ঘূর্নিঝড়ের প্রভাবে সকাল থেকে উত্তাল ছিল ইছামতি নদী। থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। আবার মাঝে মাঝে স্বল্প সময়ে জন্য রোদের দেখাও মিলছিল। কিন্তু দুপুরের আগে নদীর জোয়ারের পানি ব্যাপক মাত্রায় বৃদ্ধি পেলে বাঁধ ছাপিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। ঘূর্নিঝড়ের প্রভাবে গেল কয়েক যুগে ইছামতি নদীকে এমন ভয়ংকর রূপে দেখেননি বলেও জানান তারা।
কোমরপুরের ইউপি সদস্য ফরহাদ হোসেন হিরা এবং দেবহাটা সদরের বসন্তপুরের ইউপি সদস্য আরমান হোসেন জানান, দুপুরের আগমুহুর্তে বেড়িবাঁধ উপচে এবং কয়েকটি স্থানে ভাঙনের ফলে লোকালয়ে পানি প্রবেশের খবর পেয়ে তারা স্থানীয়দের সাথে নিয়ে বাধ রক্ষায় কাজ শুরু করেন। নদী ও খাল পাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন বাড়িতে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। ভাটা নামার সাথে সাথে পানি নেমে গেলেও মাটির ঘরগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার তীব্র সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভরা পূর্ণিমায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নদ-নদীতে স্বাভাবিকের তুলনায় ৪-৫ ফুট পর্যন্ত পানি বেড়েছে। ইছামতির বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধ টপকে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করলে সাথে সাথে সাধ্যমতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জরাজীর্ণ বেড়িবাঁ গুলোতে ইট, মাটি, বালু ভর্তি বস্তা এবং জিও ব্যাগ দিয়ে বাধ রক্ষার কাজ চলমান আছে।
দেবহাটা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার শফিউল বশার জানান, প্রাকৃতিক দূর্যোগ আটকানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। তাই আমাদের উচিৎ আগাম সংকেত শুনে সর্তক হয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কমিয়ে আনা। আমরা ইছামতি নদীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক সকল প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার সাহা জানান, ঘূর্নিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নদীতে ভাঙ্গন দেখা দেওয়ায় থানা ভবনও ঝুঁকিতে রয়েছে। নদী তীরবর্তী জনপদ গুলো রক্ষায় জরুরী ভিত্তিতে টেকসই ও স্থায়ী বাধ নির্মানের উদ্যোগ নিতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমা আক্তার বলেন, ঘূর্নিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নদীর বাধ অতিক্রম করে কয়েকটি স্থানে পানি প্রবেশ করেছে। স্থানীয়দের সহযোগীতায় সেগুলো বন্ধ করা গেছে। ফলে বড়ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশংকা আর নেই। ক্ষতিগ্রস্ত পয়েন্টগুলো মেরামতের কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
দেবহাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান জানান, ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ইছামতির পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে লোকালয়ে নদীর লোনাপানি প্রবেশ করে। এতে সীমান্তপাড়ের বহু বাড়ি ও মৎস্য ঘেরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসনের সহযোগীতায় এবং এলাকাবাসীদের স্বেচ্ছাশ্রমের কাজের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ চলছে। সীমান্তবর্তী ইছামতি নদীর স্থায়ী বাঁধ নির্মানের বিষয়ে উদ্ধর্ত্তন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে বলেও জানান তিনি।
পূর্ববর্তী পোস্ট