স্টাফ রিপোর্টার: দেবহাটায় গোপাল বিশ্বাস (৩৫) নামের এক যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার সন্ধ্যায় ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে ওই যুবকের পৈত্রিক বসতভিটার সিড়ির ঘর থেকে গলায় রশি পেঁচিয়ে ফাঁস দেয়া অবস্থায় তার ঝুলন্ত মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ। সে উপজেলার উত্তর সখিপুর নাপতিপাড়া গ্রামের মৃত সন্তোষ বিশ্বাসের ছেলে। মঙ্গলবার সকালে ময়নাতদন্ত ছাড়াই পারুলিয়া মহাশ্মশানে গোপাল বিশ্বাসের মরদেহ সৎকার করে ফেলে তার বড়ভাই জয়দেব বিশ্বাস। এনিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও থানা পুলিশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই গোপালেও মৃত্যুর ঘটনাকে নিছক আত্মহত্যা বললেও, এলাকাবাসীদের কেউ কেউ এটিকে পারিবারিক হত্যাকান্ড, আবার কেউ কেউ বলছেন, বড় ভাই জয়দেবের নির্মম শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহনন করেছেন গোপাল বিশ্বাস। এলাকাবাসী ও একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, মাদক সেবনের অভ্যাস ছিল গোপাল বিশ্বাসের। সেজন্য বিয়ের পর পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত জমি স্ত্রীর নামে লিখে দিলেও সংসার টেকেনি তার। উপরন্তু কয়েক বছর আগে বিবাহ বিচ্ছেদকালে গোপালের জমি অন্যত্র বিক্রি করে দিয়ে বাবার বাড়ি চলে যায় তার স্ত্রী। সেই থেকেই আপন বড় ভাই ট্রাক ড্রাইভার জয়দেবের বাড়িতে কাজের লোকের মতো আশ্রিত ছিল গোপাল। এলাকাবাসী আরোও জানায়, স্ত্রী-সন্তান না থাকায় একদিকে মাদক সেবন, অন্যদিকে আশ্রিত অবস্থায় থাকতে থাকতে রীতিমতো গোপাল তার ভাইয়ের সংসারে বোঝা হয়ে উঠেছিল। কিছুদিন আগে ভারতে অবস্থানরত তার ছোট ভাই পৈত্রিক আরেকটি জমি গোপনে বিক্রি করে দিলে বিষয়টি নিয়ে গোপাল ও তার বড়ভাই জয়দেবের মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়। প্রায় প্রতিদিনই নিয়ম করে গোপালকে মারপিট করতো তার বড়ভাই জয়দেব। কখনো কিল-চড়, কখনো লাঠিপেটা আবার কখনো কখনো জয়দেব গোপালকে হাতুড়ি পেটাও করতো বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। সোমবার দুপুর থেকে তীব্র ঝড়-বৃষ্টি শুরু হওয়ায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আতঙ্কে দিশেহারা ছিল এলাকাবাসী। ফলে গোপাল বিশ্বাসের মৃত্যুর খবরটি কেবলমাত্র নিকটতম প্রতিবেশী ছাড়া এলাকার অধিকাংশরাই জানতে পারেননি। মৃত্যুর পর এটিকে নিছক আত্মহত্যা বলে উপস্থাপন করেন জয়দেব বিশ্বাস। রাতেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ময়নাতদন্ত ছাড়াই গোপালের মরদেহ সৎকারের ব্যাপারে পুলিশকে রাজি করায় জয়দেব বিশ্বাস ও তার পরিবার। সেমোতাবেক মঙ্গলবার সকাল হতে না হতেই জয়দেব বিশ্বাস তড়িঘড়ি করে তার ভাই গোপাল বিশ্বাসের মরদেহটি পারুলিয়া মহাশ্মশানে সৎকার করে ফেলে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।
এদিকে মৃত্যুর আগে প্রতিনিয়ত ছোট ভাইকে শারিরীক নির্যাতন করার বিষয়ে জানতে চাইলে গোপাল বিশ্বাসকে মারপিট করার অভিযোগ অস্বীকার করেন তার বড় ভাই জয়দেব বিশ্বাস। গোপালের ময়নাতদন্ত না করা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে এটি স্বাভাবিক ঘটনা, তাছাড়া জনপ্রতিনিধিদের পরামর্শ নিয়েই গোপালের সৎকার করা হয়েছে।
দেবহাটা থানার ওসি শেখ ওবায়দুল্যাহ বলেন, মরদেহ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। গোপালের মৃত্যুর ব্যাপারে তার পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকায় এবং মৃত্যুটি আত্মহত্যা মনে হওয়ায় ময়নাতদন্ত করা হয়নি বলেও জানান ওসি।
পূর্ববর্তী পোস্ট