স্টাফ রিপোর্টার: দেবহাটা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুব আলম খোকনের নেতৃত্বে শতাধিক লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্য নিয়ে প্রকাশ্যে হামলা চালিয়ে এক নীরিহ ব্যাক্তির মৎস্য ঘের দখল করা হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের হাজিরাবাদ এলাকায় জোরপূর্বক মৎস্য ঘেরটি দখলের ঘটনা ঘটে। এসময় বাঁধা দিতে গেলে ভাইস চেয়ারম্যান খোকনের লাঠিয়াল বাহিনীর হামলা-মারপিটে গুরুতর আহত হন লাঠিয়াল বাহিনীর এক সদস্যসহ মৎস্য ঘেরটির মালিক দক্ষিন পারুলিয়ার ইয়াদিন মোল্যার দুই ছেলে আজম মোল্যা (৩৫) ও সাগর মোল্যা (২২)। এদিকে মাহবুব আলম খোকনের নেতৃত্বাধীন দখলদার বাহিনীর দায়েরকৃত উল্টো মামলায় মঙ্গলবার থেকেই সখিপুর হাসপাতালের বেডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশ প্রহরায় হাতকঁড়া পরিয়ে গ্রেপ্তার করে রাখা হয়েছে আহত ঘের মালিক আজম মোল্যাকে। আর ওই দিন দুপুরেই হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তারের পর জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে ঘের মালিকের ছোটভাই সাগর মোল্যাকে।
হাসপাতালের বেডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গ্রেপ্তার থাকা ঘের মালিক আজম মোল্যা জানান, প্রায় ২০/২৫ বছর আগে স্থানীয় মাদারী বিবি নামক এক বৃদ্ধ মহিলার কাছ থেকে তারা বাবা ইয়াদিন মোল্যা দুই একর চার শতক জমি ক্রয় করে। তার বাবার কাছে জমি বিক্রির আগে মাদারী বিবি নিয়ম মোতাবেক তার ভাইপো পারুলিয়ার মাহফুজুর রহমানকে জমিটি কেনার প্রস্তাব দিলেও জমি কিনতে অস্বীকৃতি জানায় মাহফুজুর রহমান। অথচ আজম মোল্যার বাবা ইয়াদিন মোল্যা জমি ক্রয় করার পর বৃদ্ধা মাদারী বিবির মৃত্যু হলে জমিটি কৌশলে পুনরায় দখলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে মাহফুজুর রহমান। কিন্তু আজমের পরিবার জমিটির দখল ছাড়তে না চাইলে মাহফুজুর রহমান জমিটি দখলের জন্য একের পর এক চেষ্টা চালাতে থাকে। একপর্যায়ে মাহফুজুর রহমান আদালতের মাধ্যমে জমি ফিরিয়ে নিতে টাকা জমা দেন। তাতেও রাজি না হওয়ায় মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে ঘের মালিক আজমের অনুপস্থিতে মাহফুজুর রহমানের নির্দেশে দেবহাটা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুব আলম খোকনের নেতৃত্বে শতাধিক লাঠিয়াল বাহিনীর লোকজন নিয়ে মৎস্য ঘেরটিতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ঘেরের বাসা ভাংচুররসহ আজমের অন্য একটি ঘেরের বেড়িবাধ কেটে দিতে থাকে। দুপুর দেড়টার দিকে খবর পেয়ে ঘের মালিক আজম মোল্যা ও তার ছোটভাই সাগর মোল্যা তাদের ঘেরে গিয়ে দখলদারিত্বে বাঁধা দিতে গেলে তাদের দুই ভাইকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে মাহবুব আলম খোকনের লাঠিয়াল বাহিনী। মারপিটের একপর্যায়ে লাঠিয়ার বাহিনীর এক সদস্য পারুলিয়ার আব্দুস সামাদের ছেলে রবিউল ইসলামও আহত হন। খবর পেয়ে দেবহাটা থানা পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে দখল প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেন। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় ঘের মালিক আজম মোল্যা ও তার ছোটভাই সাগর মোল্যাকে দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। এদিকে এঘটনা ধামাচাপা দিতে লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্য রবিউলকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি দেখিয়ে উল্টো ঘের মালিক আজম মোল্যা ও তার ছোটভাই সাগর মোল্যাকে আসামী করে দেবহাটা থানায় তড়িঘড়ি করে একটি মামলা দায়ের করে দখলদার মাহফুজুর রহমান। ওইদিনই সখিপুর হাসপাতাল থেকে সাগর মোল্যাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে প্রেরণ করে পুলিশ। আর ঘের মালিক আজম মোল্যার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় মেডিকেল রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত মঙ্গলবার থেকেই হাসপাতালের বেডে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে গ্রেপ্তার রাখা হয়েছে। লাঠিয়াল বাহিনীর হামলার ভিকটিম হওয়া স্বত্ত্বেও উল্টো মামলার আসামী হিসেবে হাসপাতালের বেডেই হাতকড়া পরিয়ে গ্রেপ্তার রাখার কারনে ভুক্তভোগীরা দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা করতে থানায় যাওয়ারও সুযোগ পাননি বলে অভিযোগ আজমের পরিবারের। সেজন্য ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের মধ্য দিয়ে আইনগত সহায়তা প্রাপ্তির জন্য পুলিশ সুপারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ঘের মালিক আজমের ভুক্তভোগী পরিবার।
এব্যাপারে দেবহাটা থানার ওসি বিপ্লব সাহা বলেন, ঘের দখল ও মারপিটের ঘটনায় পারুলিয়ার মাহফুজুর রহমান ঘের মালিক আজম ও তার ভাই সাগরের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ঘের মালিকের পরিবারের পক্ষ থেকেও মামলা করতে চাইলে সে সুযোগ তারা পাবেন।
পূর্ববর্তী পোস্ট