নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
উপকূলীয় দুর্যোগ প্রবণ এলাকা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা। প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের বসবাসরত উপজেলায় সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে ৫০টির অধিক হাট বাজার গড়ে উঠেছে। ওই বাজারগুলোর মধ্যে নকিপুর হাটবাজার অন্যতম। তবে উপজেলা প্রশাসন যত্রতত্র প্রকল্প হাতে নিয়ে বাজারে অপরিকল্পিতভাবে দোকানঘর বানিয়ে তা প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের কাছে বরাদ্দ দেওয়ার পায়তারা করছে বলে জনশ্রুতি আছে। সেটি বাস্তবায়ন হলে ওই খোলা বাজারের প্রকৃত ব্যবসায়ীরা দোকানঘরের প্লট বরাদ্দ থেকে হবেন বঞ্চিত। তা বন্ধ করতে স্থানীয় জনগণের পক্ষে নকিপুর হাট বাজার (তোহা বাজার) ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রাক্তন নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মো. হাসান মিয়া সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আশিকুর রহমানের মাধ্যমে রবিবার (১৩ জুন) রেজিষ্ট্রি ডাকযোগে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন ভূমিন্ত্রণালয়ের সচিব সহ ৯জনকে। যার লিগ্যাল নোটিশের স্মারক নং- এ আর/০৫/২০২১ (সাতক্ষীরা) ও বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এর রেজিষ্ট্রি রশিদ নং-৫৬৯, ৫৭০, ৫৭১, ৫৭২, ৫৭৩, ৫৭৪, ৫৭৫, ৫৭৬ ও ৫৭৭। সে একই উপজেলার চন্ডীপুর গ্রামের মুত. আনসার মিয়ার ছেলে।
অপরাপর ব্যক্তিরা হলেন-আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশ সদর দফতরের মহাপরিদর্শক, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাতক্ষীরা, শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পুলিশ সুপার ও শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ।
অনুসন্ধান ও নোটিশের বিবরণে জানা যায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত এই এলাকায় শিক্ষার হার কম। দারিদ্রতার হারও কম। দারিদ্রতার হার জেলার অন্যান্য এলাকার চেয়ে অনেক বেশি। তাই প্রায় ১ দশকের পূর্বে এলাকার কিছু অস্বচ্ছল লোকদের কথা ভেবে তাদের কর্মসংস্থানের একটি ক্ষেত্র তৈরির পাশাপাশি সাধারণ শ্রেণি- পেশার মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রাদি ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য একটি বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই বাজারটি নকিপুর হাট বাজার বা খোলা বাজার নামে পরিচিত। তবে সম্প্রতি ওই জায়গায় নতুনভাবে দোকান বানিয়ে তা প্রভাবশালীদের কাছে বরাদ্দ দেওয়ায় পায়তারায় খোলা বাজারের প্রকৃত ব্যবসায়ীরা হতভম্ভ হয়ে পড়েছে। অপরদিকে প্রকৃত ব্যবসায়ী ও সচেতন মহল ওই হাটবাজারের সাধারণ ব্যবসায়ীদের নির্ধারিত জায়গায় দোকান নির্মাণ বা বরাদ্দ বা তঞ্চকী বন্দোবস্ত বাতিলের দাবিতে একাধিকার মানববন্ধন ও সভা-সেমিনার করেছে। সরকার যে উদ্দেশ্যে ঐ জমি অধিগ্রহণ করেছিল। উপজেলা প্রশাসন ওই জায়গায় নতুন দোকান ঘর বানিয়ে প্রভাবশালীদের কাছে বরাদ্দ দিলে তা আদৌ বাস্তবায়ন হবে না।
সূত্রে প্রকাশ, ১৮৫৭ সালে শ্যামনগর থানা গঠিত হয়। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ উপজেলা। যার আয়তন ১৯৬৮.২৪ বর্গ কিলোমিটার। উপজেলার অধিকাংশই মানুষ কৃষি কাজের মাধ্যমে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন। ওই উপজেলার প্রাণকেন্দ্র নকিপুর ও বাঁধঘাটা। ঔখানে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকার ৬৩ শতক জমি অধিগ্রহণ করে ২০০২ সালে একটি বাজার গড়ে তোলেন।
লিগ্যাল নোটিশ প্রদানকারী আইনজীবী মো. আশিকুর রহমান জানান, আসলে সরকার ওই জায়গা অধিগ্রহণ করে একটি খোলা বাজার প্রতিষ্ঠা করেছিল। সেই সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সরকারের উদ্দেশ্য ছিল এলাকার হতদরিদ্র অস্বচ্ছল ব্যক্তিরা বাজারে দোকান দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে তাদের সংসার জীবন নির্বাহ করবে। সম্প্রতি ওই জায়গায় উপজেলা প্রশাসন নতুন দোকান ঘর নির্মাণ করে প্রভাবশালীদের কাছে বরাদ্দ দেওয়ার পায়তারা করছে। সেটি বাস্তবায়ন হলে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সেজন্য স্থানীয় জনগনের পক্ষে বাজারের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক আমার মাধ্যমে ভূমিমন্ত্রণালয়ের সচিব সহ ৯জনকে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছি। যেহেতু ওই জায়গায় এখনও তারা কোনো স্থাপনা নির্মাণ করে নাই। তাই নোটিশে আমরা তাদের জবাব দেওয়ার কোনো তারিখ উল্লেখ করিনি। যদি তারা স্থাপনা তৈরি করে তখন মামলায় যাবো আমরা। ওই জায়গার সমস্ত কাজগপত্রাদি আমার কাছে আছে। রিটের সময় আদালতে দাখিল করবো।
এ প্রসঙ্গে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু জাফার গিফারী জানান, এ ধরণের নোটিশের বিষয়ে কিছুই জানি না। তবে ওইখানে উপজেলা প্রশাসনের ঘর বানানো কোনো এখতিয়ার নেই। তিনি আরও জানান, তৃতীয় কোন পক্ষ ওখানে কিছু করছে কি না তা খোঁজ-খবর নিয়ে দেখবো।