শুক্রবার ভোর বেলা। ফজরের নামাজ শেষে বাড়ির নিচতলায় অপেক্ষা করছিলেন আরাফাত হোসেন। এমন সময় তার বাড়িত উপস্থিত হলেন ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মাকসুদ খান। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে একই স্থানে হাজির হলেন, বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু। দুই প্যানেলের দুই প্রার্থীকে দেখেই ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন এর প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরাফাত হোসেন হতচকিত হয়ে পড়েন। এরই মধ্যে আরাফাত হোসেন বুঝতে পারেন দুই প্যানেলের দুই প্রার্থীর আগমনের উদ্দেশ্য? কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে আরাফাত হোসেন সভাপতি প্রার্থী কাজি নওশাদ দিলওয়ার রাজু ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মাকসুদ খান কে বিদায় করে দেন। বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে, সিএন্ডএফ এজেন্ট ও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। কেউ কেউ মন্তব্য করেন, রাজনৈতিক মতাদর্শের দিক দিয়ে দুজনেরই মিল রয়েছে। তারা আ’লীগ সেজে সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ দখলের ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে, বিএনপি-জামায়ত সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী হওয়ায় কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজুর স্বরূপ উন্মোচন হয়ে গেছে। অপরদিকে, মাকসুদ খান আ’লীগ সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করলেও তার দলীয় মতাদর্শ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। নির্বাচন কমিশনারের বাড়িতে দুই প্যানেলের দুই প্রার্থীর মিলনকে কেউ কেউ প্যানেল ক্রসিং বলেও মন্তব্য করেছেন।
প্রসঙ্গত, ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আসন্ন নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী কাজি নওশাদ দিলওয়ার রাজুর মনোনয়নপত্র সমর্থনকারী হিসাবে স্বাক্ষর করেন আরেক সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম। কিন্তু মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম নির্বাচন কমিশনার বরাবর অভিযোগ করেন, তিনি ওই মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর করেননি। সৃষ্টি হয় জটিলতা। নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য খুলনার বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের দ্বারস্থ হন। গত শনিবার খুলনার বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য নির্বাচন কমিশন সহ উভয় পক্ষকে তলব করেছিলেন। কিন্তু, খুলনা বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের শুনানির আগের দিন কেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মাকসুদ খান ও বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বাড়িতে হাজির হলেন? ঐদিন ফজরের নামাজের পর দুই মেরুর দুই প্রার্থীর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বাড়িতে হাজির নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
একাধিক সিএন্ডএফ এজেন্ট জানিয়েছেন, কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু ও মাকসুদ খান দুজনেই বিএনপি পন্থী বলে ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক মহলে পরিচিত। কিন্তু তারা দুজনেই আওয়ামী লীগের ছদ্দবেশ ধারণ করে ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এর পদ দখলের আপ্রাণ চেষ্টাও করেছিলেন। ক্ষমতাসীন দলের এক শীর্ষ নেতা ও এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা কে ম্যানেজ করে তারা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের দলীয় প্যাডে তারা প্রমাণ পত্র সংগ্রহ করে ফেলেছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সমর্থিত সিএন্ডএফ এজেন্টরা জোটবদ্ধ হওয়ার কারণে শেষ পর্যন্ত তাদের দুজনকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা সম্ভব হয়নি।
গত ৪ সেপ্টেম্বর ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনী সাধারণ সভায় সাতক্ষীরা সদর-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি সভাপতি পদে বিএনপিপন্থী কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু ও সাধারণ সম্পাদক পদে আওয়ামীলীগপন্থী মোস্তাফিজুর রহমান নাসিমসহ ৯ সদস্য কমিটি ঘোষণা করেন। কিন্তু গঠনতন্ত্র পরিপন্থি ওই ঘোষিত কমিটি হাইকোর্টের নির্দেশনায় খুলনা বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর অবৈধ ঘোষণা করেন।
পরবর্তীতে খুলনা বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর আওয়ামী লীগ নেতা এজাজ আহমেদ স্বপনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে, দেড় মাসের মধ্যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেয়। আহ্বাঢক কমিটি যথানিয়মে সাধারণ সভা আহ্বান করে নির্বাচনের লক্ষ্যে তিন সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করে। অপরদিকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার লক্ষ্যে প্রার্থীরা ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে।
এরই ধারাবহিকতায়, গত সপ্তাহে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হক ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আওয়ামী লীগের লেটার প্যাডে ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনে দলীয় প্যানেল ঘোষণা করেন। আ’লীগ সমর্থিত প্যানেলে সভাপতি পদে এজাজ আহমেদ স্বপন ও সাধারণ সম্পাদক পদে কথিত আওয়ামী লীগ কর্মী মাকসুদ খান সহ ৯ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল ঘোষণার পরপরই ভোমরা ও বেনাপোলের বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত সিএন্ডএফ এজেন্টরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায়। বিএনপি ও জামায়েত সমর্থিত প্যানেল কিছুটা কৌশলে অগ্রসর হতে থাকে।
বিএনপি ও জামায়েত সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি পদে কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু ও সাধারণ সম্পাদক পদে ওহিদুল ইসলামকে চূড়ান্ত করা হয় কিন্তু মনোনয়নপত্রে সমর্থনকারীর স্বাক্ষর নিয়ে জটিলতার কারণে সভাপতি প্রার্থীর নাম তারা প্রকাশ করে না। কিন্তু কাজি নওশাদ দিলওয়ার রাজুর মনোনয়নপত্র খুলনার বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর বৈধ ঘোষণা করলে, বিএনপি-জামায়েত সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি পদে তার নাম ঘোষণা করা হয়।
সর্বশেষ, সমঝোতার মাধ্যমে প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজুকে সভাপতি ও মাকসুদ খান কে সাধারণ সম্পাদক পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতা নির্বাচিত করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। বাকি পদগুলোতে একজন প্রার্থী রেখে অন্যদের প্রার্থীতা প্রত্যাহারের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্র থেকে জানা গেছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বাড়িতে বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজুও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মাকসুদ খানের মিলনমেলাকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে অবিশ্বাস ও সন্দেহ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরাফাত হোসেন, সভাপতি প্রার্থী কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মাকসুদ খান তার বাড়িতে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু, কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু প্রধাণ নির্বাচন কমিশনারের বাড়িতে যাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।
পূর্ববর্তী পোস্ট