ফিরোজ হোসেন ঃ সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর কতৃপক্ষের গাফিলতিতে সরকারি পার্কিং ইয়ার্ড থেকে ট্রাক চুরির ঘটনা ঘটছে। এখন দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে বন্দরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এমন অভিযোগ করে বন্দর ব্যবহারকারীরা বলেন নিরাপত্তা হীনতায় ভারত বাংলাদেশের হাজারো পণ্যবাহী ট্রাক। ট্রাক চুরি ও পার্কিং ইয়ার্ডের সিকিউরিটি গার্ডদের বেপরোয়া চাঁদা আদায়ে ট্রাক মালিক, ড্রাইভার ও ট্রান্সপোর্ট মালিকসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের ক্ষোভ প্রকাশ।
গত ১৬ জুলাই ভোমরা স্থলবন্দরের সরকারি পার্কিং ইয়ার্ড থেকে চুরি হওয়া সাতক্ষীরা- ট -১১-০৩৭২ নাম্বারের ট্রাকটির মালিক সদর উপজেলার আলিপুর গ্রামের লুৎফর হায়দার জানান, বন্দর কতৃপক্ষের অবহেলায় সরকারি পার্কিং ইয়ার্ড থেকে ট্রাক চুরি হয়েছে। বন্দরের পার্কিং এরিয়ায় ট্রাক ঢুকলেই একশো টাকা দিতে হয় সিকিউরিটি গার্ডদের। কিন্তু এখন বন্দর কতৃপক্ষ ও সিকিউরিটি গার্ডরা দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ভোমরা স্থলবন্দরের পার্কিং ইয়ার্ডে সরেজমিনে যেয়ে দেখাযায় বাংলাদেশি ট্রাক প্রতি একশো টাকা ও ভারতীয় ট্রাক প্রতি পঞ্চাশ টাকা নিচ্ছে সিকিউরিটি গার্ড সদস্যরা। এসময় তাদের কাছে জানতে চাইলে টাকা নেওয়ার কথা সরাসরি অশিকার করেন তারা।
ট্রাক চুরির বিষয়ে জানতে চাইলে দায়িত্বে থাকা সিকিউরিটি ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ জানান,সরকারি পার্কিং-এ যেসব বাংলা ট্রাকগুলো প্রবেশ করে তাদের কোনো রেকর্ড এন্ট্রি করাহয়না। শুধু ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকগুলো এন্ট্রি করাহয়। বাংলা ট্রাকগুলো যখন তখন সরকারি পার্কিং এরিয়ায় যাওয়া আসা করে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন কার ট্রাক কখন কে নিয়ে গেছে আমাদের জানা নেই।
ট্রাক থেকে টাকা নেওয়ার কথা অশিকার করে তিনি বলেন, টাকা নেওয়ার কোনো আদেশ নেই আমাদের।
এসময় ওই সিকিউরিটি ইনচার্জ টাকা নেওয়ার কথা অশিকার করায় পার্কিং এরিয়ায় অবস্থান করা শতাধিক বাংলাদেশি ও ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভাররা তীব্র প্রতিবাদ জানান।
প্রতিবাদ জানিয়ে সাদ্দাম নামের বাংলা ট্রাক ড্রাইভার বলেন, সরকারি পার্কিং এরিয়ায় পণ্য লোর্ড আনলোর্ড করতে আসলে ট্রাক প্রতি একশো টাকা পার্কিং-এর গেটই দিতে হয়। টাকা না’দিলে পার্কিংএ ঢুকতে দেয়না সিকিউরিটি গার্ড সদস্যরা। টাকা না’দিতে চাইলে গালিগালাজ ও মারধর করতে আসে তারা।
ভোমরা বন্দরে আমাদের নিরাপত্তা নেই মন্তব্য করে ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভারা বলেন ভোমরা বন্দরের পার্কিংএ ঢুকলে আমাদের কাছ থেকে জোরকরে পঞ্চাশ টাকা ও রাতে থাকলে সকালে বিশ টাকা নেয় সিকিউরিটি গার্ড সদস্যরা। না’দিতে চাইলে আমাদের নানান ভাবে লাঞ্চিত করাহয়। এখনতো পার্কিংএ ট্রাকও চুরির ঘটনা ঘটছে।
সরকারি পার্কিং ইয়ার্ড থেকে ট্রাক চুরির ঘটনায় বন্দর সংশ্লিষ্ট অনেকেই দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা অতি দ্রুত দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
ট্রাক চুরি ও সিকিউরিটি সদস্যদের বেপরোয়া চাঁদাবাজির ব্যাপারে জানতে চাইলে ভোমরা স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, পার্কিং ইয়ার্ড থেকে ট্রাক চুরি হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। ট্রাক চুরি বা সিকিউরিটি সদস্যদের টাকা নেওয়ার ব্যাপারে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে তার ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৩ ই জুলাই বেলা ১২ টারদিকে ট্রাক ড্রাইভার ভোমরা লক্ষ্মী দাড়ি গ্রামের ছহিল উদ্দীন সরদার সাতক্ষীরা – ট -১১-০৩৭২ নাম্বারের ট্রাক্টরটি ভোমরা স্থলবন্দরের সরকারি পার্কিং-এ রেখে প্রতিদিনের ন্যায় বাড়িতে চলে যায়। ট্রাক ড্রাইভার ছহিল উদ্দিন তিনদিন পর ১৬ জুলাই ভোমরা সরকারি পার্কিং ইয়ার্ডে ট্রাকটি আনতে গেলে দেখেন যে ট্রাকটি নেই। পরবর্তীতে ট্রাকটি অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও হদিস পাওয়া যায়নি।
চুরি হওয়া ট্রাকটির মালিক সদর উপজেলার আলিপুর গ্রামের লুৎফর হায়দার বাদী হয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় কারোর নাম উল্লেখ না করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
এব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি স.ম কাইউম জানান, ট্রাক চুরির একটি অভিযোগ পেয়েছি। ইতিমধ্যে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে বলে জানান তিনি।