সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসেসিয়েশনের কমিটি গঠন নিয়ে চলছে তুলকালাম কান্ড। গত আট মাসের ব্যবধানে তিনবার কমিটি পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রতিবারই কমিটি গঠন নিয়ে লাখ লাখ টাকার আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ সোমবার শ্রম আদালতের নির্দেশনায় আহবায়ক এজাজ আহমেদ স্বপনকে সরিয়ে মিজানুর রহমানকে আহবায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সাতক্ষীরার ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসেসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসেসিয়েশনের এক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার কথা থাকলেও সাধারন সদস্যদের মতামতকে পাশ কাটিয়ে একটিমাত্র প্যানেল খাঁড়া করা হয়। সাধারন সভায় উপস্থিত প্রধান অতিথি সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজুকে সভাপতি ও মোস্তাফিজুর রহমান নাসিমকে সাধারন সম্পাদক ঘোষণা করে কমিটি গঠন করে দেন।
এদিকে সংসদ সদস্যের এই ঘোষণাকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রীট পিটিশন করেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এজাজ আহমেদ স্বপন। এই রীটের প্রেক্ষিতে শ্রম আদালতের নির্দেশনায় গত ২০ নভেম্বর ২০২১ তারিখে এজাজ আহমেদ স্বপনকে আহবায়ক এবং আশরাফুজ্জান আশু, মিজানুর রহমান, মাকসুদ খান ও রামকৃষ্ণ চক্রবর্তীকে সদস্য করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এদিকে এজাজ আহমেদ স্বপন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন করতে ব্যর্থ হন। তার বিরুদ্ধে ভোটার তালিকা তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এজাজ আহমেদের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, ৪৮ লাখ টাকার তহবিল তছরুপ, দূর্নীতি এবং সঠিক ভোটার তালিকা করে যথা সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যর্থতার অভিযোগ আনা হয়। গত ২৯ মার্চ আহবায়ক কমিটির ৪ সদস্য এক বৈঠকে বসে এজাজ আহমেদ স্বপনকে অপসারণ করে শ্রম আদালতে চিঠি দেন। ১১ এপ্রিল সোমবার শ্রম আদালতের নির্দেশনায় মিজানুর রহমানকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয় ।
আগের কমিটির আহবায়ক এজাজ আহমেদ স্বপন অভিযোগ করে বলেন,আমার কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নাম করে এ্যাসোসিয়েশনের ৯লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। পরবর্তীতে বিষয়টি বুঝতে পেরে আমি টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেই। ফলে তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র পাকিয়ে এমনটা করেছে।
আর আহবায়ক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে টাকা লেনদেনের বিষয়ে তিনি বলেন, এসমস্ত টাকার কোনো প্রমাণ থাকেনা। তবে জেডিএলে টাকা ছাড়া একটি কাজও হয়না,এটা সর্বজনস্বীকৃত।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোমরা স্থলবন্দরের একজন ব্যবসায়ি বলেন,প্রথম কমিটি গঠনে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা,দ্বিতীয়বার ৪০ লাখ টাকা এবং দ্বিতীয়বার ২০ লাখ টাকার আর্থিক লেনদেন হয়েছে।
এদিকে,নতুন কমিটির আহবায়ক মিজানুর রহমান বলেন,আগের কমিটির আহবায়ক এজাজ আহমেদ স্বপন এ্যাসোসিয়েশনের ৪৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। এছাড়া ভোটার তালিকা প্রণয়নে ব্যর্থ ছিলেন তিনি। আহবায়ক বাদে ৪ জনের সর্বসম্মতিক্রমে এজাজ আহমেদ স্বপনের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে তাকে অপরসারণের জন্য জেডিএল,খুলনাকে চিঠি দেওয়া হয়। তাদের সিদ্ধান্তেই আমি আহবায়ক হয়েছি।
৮ মাসে তিনবার কমিটি পরিবর্তনের বিষয়ে নাগরিক কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক আনিছুর রহিম বলেন,সাতক্ষীরায় গর্ব করার মতো যেসব প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে,তার মধ্যে ভোমরা স্থলবন্দর একটি। অথচ গণতান্ত্রিক উপায়ে ভোট না দেওয়ার কারণে ভোমরা স্থলবন্দরে একটি অস্থিরতা বিরাজ করছে। যার প্রভাবে স্থলবন্দরের উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে।
তিনি অতিদ্রুত ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠনের দাবি জানান।