স্টাফ রিপোর্টার: পৈত্রিক জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ফিল্মি স্টাইলে হামলা চালিয়ে জিল্লুর রহমান (৪৮) এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর পর একটি পা-ও ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে ৬ সহোদর ভাই। শুক্রবার (২৯ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঘোনা গ্রামে সংঘবদ্ধ এ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাটি ঘটে। সেসময় জিল্লুর রহমানের পাশাপাশি তার স্ত্রী বিলকিস নাহার (৩৮) কে-ও মারপিট করেন হামলাকারীরা। আহত জিল্লুর রহমান ঘোনা গ্রামের মৃত খোদাবক্সের ছেলে।
রক্তাক্ত অবস্থায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জিল্লুর রহমানকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেন স্বজনরা। এসময় উপুর্যপুরি পিটুনিতে ভেঙে গুড়িয়ে যাওয়া জিল্লুরের বাম পায়ের উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে জরুরী ভিত্তিতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা ঢাকায় অন্য কোন বিশেষজ্ঞ অর্থপেডিক সার্জনের কাছে নেয়ার পরামর্শ দেন। তবে তাৎক্ষনিক জিল্লুর রহমানের মাথায় একাধিক সেলাই দিয়ে রক্তক্ষরণ বন্ধ করেন চিকিৎসকরা।
আহতের স্ত্রী দেবহাটা উপজেলার সুবর্ণাবাদ গ্রামের জাকাত বিশ্বাসের মেয়ে বিলকিস নাহার বলেন, তাদের দাম্পত্য জীবনে কোন পুত্র সন্তান হয়নি। দুটি কন্যা সন্তান নিয়েই তারা সুখে সংসার করছিলেন। তার শ্বশুরের রেখে যাওয়া বিপুল সম্পত্তির স্বত্ত¡ মোতাবেক স্বামী জিল্লুর রহমান ও তার অপর ৬ ভাই এবং ৬ বোন অংশীদার। কিন্তু তার স্বামী জিল্লুর রহমানের অংশের জমি বারবার বলা স্বত্তে¡ও বুঝিয়ে না দিয়ে অপর ৬ ভাই কামরুজ্জামান, খায়রুল ইসলাম, আব্দুর রফিক, বদরুজ্জামান, রবিউল ইসলাম ও এনামুল হোসেন জবরদখল ও আত্মসাতের পায়তারা করে আসছেন। কয়েক মাস আগে আর্থিক অনটনের কারনে তার স্বামী বন্টননামা মোতাবেক নিজের অংশের থেকে ৩ শতক জমি প্রতিবেশি আফসার উদ্দীনের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান বাবলুর কাছে বিক্রি করেন। এখানেই বাঁধে বিপত্তি। তারপর থেকে স্বামী জিল্লুরকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল অপরাপর ৬ ভাই।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ৬ ভাই কামরুজ্জামান, খায়রুল ইসলাম, আব্দুর রফিক, বদরুজ্জামান, রবিউল ইসলাম, এনামুল হোসেন ও ভাতিজা আইজুল ইসলাম জোরপূর্বক তাদের বাড়িতে ঢুকে স্বামী জিল্লুর রহমানকে টেনে হিচড়ে রাস্তার ওপর নিয়ে লোহার রড এবং বাঁশ ও কাঠের লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে। সেসময় বিলকিস নাহার তার স্বামীকে বাঁচাতে গেলে তাকেও পেটায় হামলাকারীরা। একপর্যায়ে স্থানীয়রা তাদেরকে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে তার স্বামীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়।
এদিকে এ ঘটনার দু’দিন আগেই জিল্লুর রহমানের কাছ থেকে জমি ক্রেতা প্রতিবেশি আফসার উদ্দীনের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু (৬০) কে পিটিয়ে তারও একটি পা ভেঙে গুড়িয়ে দেয় এসব হামলাকারীরা। বর্তমানে ওই মোস্তাফিজুর রহমান বাবলুও সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন। সেঘটনায় ভিকটিমের ভাই ইমরান হোসেন সবুজ বাদি হয়ে জিল্লুরের ৬ ভাইকে আসামি করে সাতক্ষীরা সদর থানায় মামলা (নং-৪১) দায়ের করলেও অদ্যবধি মামলার আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় হামলাকারীরা দ্বিতীয় দফায় আবারও এ সন্ত্রাসী হামলার সুযোগ পেয়েছে বলে অভিযোগ ভিকটিম পরিবার দু’টির।
এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আহত জিল্লুর রহমানের পরিবারের পক্ষ থেকে হামলাকারী অপর ৬ ভাই সহ অন্যান্যদের আসামি করে সাতক্ষীরা সদর মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছিল বলে ভিকটিমের পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
সাতক্ষীরা সদর থানার সাব ইন্সপেক্টর ও দু’দিন আগে দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা মো. হাসান বলেন, জমিজমি নিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে বিরোধ চলে আসছিল। দু’দিন আগেই সেখানে জমির ক্রেতাকে মারপিটের ঘটনায় একটি মামলা রূজু করা হয়েছে। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যহত রয়েছে। পাশাপাশি নতুন করে এক ভাইকে অপর ৬ ভাই মিলে পেটানোর ঘটনায় ভিকটিম পরিবারকে থানায় এজাহার দিতে বলা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানান তিনি। পরবর্তীতে আইনি প্রক্রিয়ার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে ওসি মো. মহিদুল ইসলামকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।