অনলাইন ডেস্ক ঃ মিয়ানামারে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে ফের গুলিতে ৩৮ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় ব্যাপক ধরপাকড় চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। বিক্ষোভ শুরুর পর এক দিনে এটাই সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা। অন্তত ৩শ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রতিবেশী দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মঙ্গলবার মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানানোর একদিন পর আবারও রক্তাক্ত হলো দেশটি।
মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে আবারও বৈঠকে বসতে যাচ্ছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। কাল এ বৈঠক আহ্বান করেছে যুক্তরাজ্য। খবর বিবিসি, রয়টার্স ও এএফপিসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের।
বুধবার সকাল থেকেই ইয়াঙ্গুন ও নেপিদোসহ মিয়ানমারের বেশিরভাগ শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। সবখানেই মারমুখী অবস্থানে ছিল নিরাপত্তা বাহিনী। মধ্যাঞ্চলীয় শহর মনওয়ায় পুলিশের গুলিতে পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
ইয়াঙ্গুনে গুলিতে মারা গেছেন দুজন। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে একটি প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া মধ্যাঞ্চলীয় শহর মিংগিয়ানে গুলিবিদ্ধ হয়ে আরেক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে ছাত্রনেতা মোয়ে মিন্ট হেইন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। সংঘর্ষে মিন্ট হেইন নিজেও আহত হয়েছেন।
তার পায়ে আঘাত লেগেছে। তিনি বলেন, তারা আমাদের ওপর গুলি করেছে। একজন নিহত হয়েছেন, তার বয়স কম, একজন কিশোর, তার মাথায় গুলি লেগেছে।
এসব শহরের পাশাপাশি পশ্চিমাঞ্চলীয় চীন রাজ্য, উত্তরাঞ্চলীয় কাচিন, উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় শান, মধ্যাঞ্চলের সাগাইং ও দক্ষিণাঞ্চলের দাউই শহরেও প্রতিবাদ হয়েছে।
এছাড়া, রাতে আরও কয়েকজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। চীন রাজ্যের আন্দোলনকারী সালাই লিয়ান গণমাধ্যমকে বলেন, এ দেশের কেউই একনায়কতন্ত্র চান না, এটি তুলে ধরাই আমাদের লক্ষ্য।
বার্তা সংস্থা মিয়ানমার নাও জানিয়েছে, ইয়াঙ্গুনসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করার পর পুলিশ প্রায় ৩০০ জনকে গ্রেফতার করেছে।
যাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে প্রতিরোধ আন্দোলনের বেশ কয়েকজন নেতাও আছেন বলে একজন আন্দোলনকারী জানিয়েছেন।
এসব ঘটনার বিষয়ে মন্তব্য নেয়ার জন্য রয়টার্সের পক্ষ থেকে ফোন করা হলেও ক্ষমতাসীন সামরিক কাউন্সিলের মুখপাত্র ফোন ধরেননি।
মিয়ানমারের সংকটময় পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়লেও অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান ন্যাশন্স (এএসইএএন) এর সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল বৈঠকে বসে কোনো অগ্রগতি অর্জন করতে পারেননি।
সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রতি সংযম দেখানোর আহ্বান জানালেও সদস্য দেশগুলোর মধ্যে শুধু ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স ও সিঙ্গাপুর সু চি ও অন্যান্য বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
মিয়ানমারে গত নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সু চির ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিপুল জয় পায়। কিন্তু নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলে সেনাবাহিনী।
তারা পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে সামরিক অভ্যুত্থান করে। এদিন সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী সু চির সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে।
এরপর দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। সেনাবাহিনী সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে। জান্তা শাসকদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দিন দিন জোরালো হচ্ছে। সঙ্গে দমন-পীড়নও জোরদার করছে নিরাপত্তা বাহিনী।