স্টাফ রিপোর্টার : শিবির কেন পরিচয় গোপন করলো এটা নিয়ে অনেকের অন্তর জ্বালা।
কিন্তু এইটা তো আসল প্রশ্ন না।
আসল প্রশ্ন হলো, ঠিক কতটা নৃশংসতা চালানো হলে একটা দলের সভাপতি তাঁর রুমমেটকেও সেই দলের কথা বলতে ভয় পায়?
প্রশ্ন করেন, শুধুমাত্র শিবির অভিযোগ দিয়ে এই দেশে কেন একজন হিন্দু ছেলে বিশ্বজিৎ কে একশোটা ক্যামেরার সামনে দিনদুপুরে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিলো?
তখন কেন প্রশ্ন করেন নাই?
আবরার ফাহাদের ফ্যামিলিকে বলতে হয়েছিলো, আবরার শিবির করে না। কেন? কারণ আবরার যদি সত্যিই শিবির করতো, তাহলে আবরার হত্যা জায়েজ হয়ে যাইতো।
প্রশ্ন করেন, কেন একটা গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলকে এতোটা স্টিগমাটাইজ করা হয়েছিলো?
গত ১৫ বছর শিবির বলে কত ছেলে মেয়ে টিচার হতে পারেনি, কত ছেলে মেয়ের বিসিএস নিয়োগ হয় না, শুধু বুয়েট কুয়েট চুয়েট আর রুয়েট থেকে কতগুলো ছেলেমেয়েকে বের করে দিয়ে জীবন ধ্বংস করা হয়েছে?
আমার বাসার পাশে ক্যান্সারে আক্রান্ত হাফিজুর ভাইকে তুলে নিয়ে ওষুধ পানি না দিয়ে চারদিনে মেরে ফেলেছে। কেউ এক ফোঁটা পানি ফেলেছেন? প্রথম আলো একটা কলাম লিখেছে? লেখেনি। কারণ হাফিজুর ভাই শিবির করতেন, শিবির মেরে ফেললেই বা কী?
দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের পর দুইদিনে ১৫০+ মানুষকে স্রেফ গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। প্রথম আলোতে যান। সেখানে গাড়ি ঘোড়ার জন্য আহাজারি পাবেন, শিবিরের মৃত একটা মানুষের জন্যও কোন সহানুভূতি পাবেন না।
রাস্তায় গাছ ফেলে বিক্ষোভ করে শিবির খুব অন্যায় করেছে, তাই প্রথম আলো গাছের জন্য কান্নাকাটি করেছে। অথচ ১৫০ জামাত শিবির কর্মীর জন্য সহানুভূতি দিয়ে একটা শব্দও লিখেনি। জ্বি, গত ১৫ টা বছর এই দেশে শিবিরের জীবনের চাইতে একটা গাছের জীবনের মূল্য বেশি ছিলো।
অবস্থা এমন দাঁড়াইছিলো, শিবিরের কেউ যদি ট্রেনের ধাক্কায় মরে যায়, তবে আমরা সেই ট্রেনের ক্ষতি হলো কি না, সেটা নিয়ে চিন্তা করেছি। শিবির মরেছে? মরুক। ও তো মরারই ছিলো।
দেশের প্রতিটা ক্যাম্পাসের গেস্ট রুম গুলো যে টর্চার রুমে রুপ লাভ করেছিলো তখন কি কেহ কোন প্রশ্ন করেছিলেন শিবির কোথায়?
২০১৩ সালে ঝিনাইদহে মায়ের অপেক্ষায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা সোহান কে তুলে নিয়ে শিবির করার অপরাধে ৩ দিন গুম রেখে চোখ উপড়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিলো তখন কি প্রশ্ন করেছিলেন
শিবির কেন ওপেন হয় না?
২০১৩ সালে ঝিনাইদহে ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী থাকার খবর জেনেও ডা: মুজাহিদ কে ক্রসফায়ার দেওয়া হয়েছিলো। এবং তার শাহাদাতের মাত্র ৩ মাস পরে জমজ কন্যা সন্তান জন্মলাভ করেছিলো তখন কি প্রশ্ন করেছিলেন শিবির কেন ওপেন হয় না?
শিবির কোথায়?
যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলে যখন শিবির ট্যাগ দিয়ে চোখ নষ্ট করে দিয়েছিলো তখন কি প্রথম আলো প্রশ্ন করেছিলেন?
২০০৯ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির সন্দেহে অকথ্য মারপিটের পরে তার পুরুষাঙ্গে সিগারেটের তাপ দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো তখন কি প্রশ্ন করেছিলেন কেন শিবির ওপেন হয় না?
সমস্ত বাংলাদেশে হত্যার পরে যাকে হত্যা করা হয়েছে বরং তাদের কেই মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে।
হত্যার পরে ভয়েও অনেকে পরিচয় দিতে পারেনি।প্রকাশ করতে পারেনি।
এ তো ২/১ টা ঘটনা- এমন হাজার হাজার ঘটনা যে দৃষ্টির অগোচরে তার হিসেব কি কেহ করেছেন?
জ্বি, আমরা আপনারা অমন একটি সমাজই গড়ে তুলেছিলাম। গত ১৫ বছর শিবির মাথা বের করলেই সেই মাথা উড়িয়ে দিয়েছেন। আর এখন অবাক হয়ে বলতেছেন, শিবির প্রকাশ্যে আসে না কেন? ওরা এতো দুষ্টু কেন?
এই যে ভুল প্রশ্ন, এই ভুল প্রশ্ন করার জন্যই হাসিনা শেষপর্যন্ত আমার আপনার উপর গুলি চালানোর সাহসটা পেয়েছিলো।
ভুল প্রশ্ন করলে ঠিক উত্তরটা পাবেন কেমনে?
শিবিরের অপরাধ না থাকার পরও প্রকাশ্যে শিবিরের উপর হামলার ডকুমেন্টস থাকার পরও আপনারা মি: মিডিয়ানরা শিবিরের বিরুদ্ধেই নিউজ করেছেন
তখন দেখেন নি শিবির কারা? শিবির কি করে?
সিলেট সহ সমস্ত দেশের বন্যা ও দূর্যোগে শিবির দেখেন নি?
দেখবেন বা কি করে…..
যে চোখ দিয়ে ভালো কিছু দেখতে হয় আপনাদের সে চোখ বহু আগেই বধির হয়ে গিয়েছে সেটা আমরা জানতাম।
বরং ঠিক প্রশ্নটা করতে শেখেন।
যে দেশে একটা বৈধ রাজনৈতিক দল করলে নিজের রুমমেটকেও প্রাণের ভয়ে বলা যায় না, অমন ভয়ঙ্কর বাকশালী ফ্যাসিবাদ এই দেশে আর কখনও না হয়, সেই প্রশ্নটা করা বেশি জরুরি।
এজন্য শিবির কখনো আপনাদের দেখার অপেক্ষা না করে তাদের একমাত্র ভরসার স্থল আরশে আজিমের অধিপতির দিকেই তাকিয়ে ছিলো।
ফরিয়াদ তার নিকটই করেছে।আর্তনাদে আসমান ও জমিন প্রকম্পিত হয়েছে কিন্তু জালিমের হৃদয় বিগলিত হয়নি।
আলহামদুলিল্লাহ অবশেষে ছাত্র জনতার আন্দোলনে সরাসরি আসমানি সাহায্যের মাধ্যমে বাতিলের মসনদ কে প্রকম্পিত করেছে।
হাসবুনাল্লহা অনে’মাল অকিল, নে’মাল মাওলা অনি’মান নাছির। লেখক মো. আব্দুল মোমিন।