নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের খবরে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে মতুয়াদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবমূখর পরিবেশ। শ্যামনগরের ১০ সহ¯্রাধিক মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে বইছে আনন্দ বন্যা। জানা যাচ্ছে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসবেন। এ সফরসূচির অংশ হিসেবে নরেন্দ্র মোদি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তের জেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুরে যশোরেশ্বরী কালীমন্দির পরিদর্শন করবেন।
এমনই সুখবরে অন্যান্য মহলের মতো শ্যামনগরে বসবাসকারী মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে মোদিকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানা গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ২৭ মার্চ যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে আসবেন। এরই মধ্যে সেখানে তিনটি হেলিপ্যাড প্রস্তুত করা হচ্ছে। পাশাপাশি ভারত ও বাংলাদেশের পৃথক নিরাপত্তা টিম ঘটনাস্থল সফর করেছে। তারা তার নিরাপত্তার ব্যাপারে সব ধরনের ব্যবস্থা করবেন বলে জানা গেছে।
সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন স্থানে মতুয়া সম্প্রদায়ের ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ রয়েছেন। তাদের মধ্যে কেবলমাত্র শ্যামনগর উপজেলায় রয়েছেন ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ। ২৭ মার্চ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির এ মন্দির সফর যথেষ্ট ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক মহল।
যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরের পুরোহিত দিলীপ মুখার্জী একজন মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ। তিনি জানান, এ মন্দিরে প্রতি বছর শ্যামা কালীপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এ মন্দিরে পূজা অর্চনা হয়ে থাকে। এসব পূজা অর্চনায় শত শত ভক্তের সমাগম ঘটে বলে জানান তিনি।
জেলা মতুয়া সম্প্রদায়ের সভাপতি ও শ্যামনগর উপজেলা সভাপতি কৃষ্ণান্দ মুখার্জী জানান, নরেন্দ্র মোদির আগমন উপলক্ষে মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে আনন্দ বন্যা বইছে।
শ্যামনগরে যশোরেশ্বরী কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে ইতিহাস থেকে বিভিন্ন রকম তথ্য জানা যায়। ‘যশোহর খুলনার ইতিহাস’ প্রণেতা সতীশ চন্দ্র মিত্র এ মন্দির স্থাপনা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য উল্লেখ করেছেন। তাতে বলা হয়, ১৫৬০-৮০ সাল পর্যন্ত রাজা লক্ষ্মণ সেনের রাজত্বকালে তিনি স্বপ্নে আদিষ্ট হন ঈশ্বরীপুর এলাকায় একটি মন্দির নির্মাণ করেন। মন্দিরটি নির্মাণের পর সেটি বন্ধ রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে মন্দিরটি জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে ওঠে। সে সময় শ্যামনগরের ধুমঘাট ছিল বাংলার ১২ ভূঁইয়ার এক ভূঁইয়া রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজধানী। রাজা প্রতাপাদিত্য এ সময় দেখতে পান ওই জঙ্গল থেকে এক আলোকরশ্মি বেরিয়ে আসছে। তিনি তখন মন্দিরটি খোলার নির্দেশ দেন।
এরই মধ্যে মন্দিরটি খুলেই সেখানে দেখা মেলে চ-ভৈরবের আবক্ষ শিলামূর্তি। তখন থেকে সেখানে পূজা-অর্চনা শুরু হয়। ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী আরও জানা যায়, দক্ষ রাজার কনিষ্ঠ কন্যার নাম ছিল সতীবালা। তিনি জন্ম থেকে মহাদেবের পূজারিণী ছিলেন। একপর্যায়ে তিনি স্বেচ্ছায় মহাদেবকে বিবাহ করেন। এতে দক্ষ রাজার ঘোর আপত্তি ছিল। এক অনুষ্ঠানে দক্ষ রাজার উপস্থিতিতে মহাদেব আসেন। কিন্তু মহাদেব দক্ষ রাজাকে তার শ্বশুর বলে পরিচয় দেননি। এতে তিনি চরম অপমানবোধ করেন। পরে শুরু করেন দক্ষযজ্ঞ। এতে সতীবালা ও মহাদেব নিমন্ত্রিত ছিলেন না। এতে অপমান বোধ করেন সতীবালা। কিছুক্ষণ পরেই সতীবালা দেহত্যাগ করেন।
এ খবর পেয়ে কৈলাস থেকে দ্রুতবেগে নেমে আসেন মহাদেব। তিনি দক্ষ রাজার মু-ু কর্তন করে বলির জন্য নিয়ে আসা ছাগলের মু-ু কেটে সেখানে বসিয়ে দিয়ে দক্ষযজ্ঞ ল-ভ- করে দেন। পরে তিনি মৃত স্ত্রী সতীবালাকে কাঁধে নিয়ে কৈলাস পাহাড়ে চলে গিয়ে ক্ষোভে ও দুঃখে ব্রহ্মা- ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেন। এ খবর পেয়ে ব্রহ্ম ও নারায়ণ সিদ্ধান্ত নিলেন মহাদেবকে ঠা-া করতে হলে তার কাছ থেকে সতীবালার মৃতদেহ সরিয়ে নিতে হবে। সে অনুযায়ী ত্রিশূল দিয়ে সতীবালাকে ৫১ খ- করে ত্রিশূলে ঘোরানো হয়। এর এক খ- এসে পড়ে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামে। সেখানেই প্রতিষ্ঠিত হয় যশোরেশ্বরী কালীমন্দির। অপর খ-গুলো পশ্চিমবঙ্গের কালীঘাট, আফগানিস্তান, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল।
পূর্ববর্তী পোস্ট