ফিরোজ হোসেন, সাতক্ষীরা ঃ সাতক্ষীরার সুন্দরবন টেক্সটাইলস মিলস চালুসহ উচ্ছেদ হওয়া ভূমিহীনদের পূর্নবাসন, নদী ও খাল খননে অনিয়ম বন্ধ, বিনেরপোতা রাফসান গ্রুপের অবৈধ দখলকৃত সরকারি জায়গা উদ্ধার, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সীমাহীন অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে তোলা পরিবেশ দূষণকারী অবৈধ ইটভাটা বন্ধের দাবিতে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা নদী, বন ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি এবং জেলা ভুমিহীন সমিতির যৌথ উদ্যোগে নিউ মার্কেট মোড়স্থ এ পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
পথসভায় জেলা ভুমিহীন সমিতির সভাপতি কওছার আলী সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক এড. আবুল কালাম আজাদ, দৈনিক দক্ষিণের মশাল পত্রিকার সম্পাদক অধ্যক্ষ আশিক এলাহী, বাংলাদেশ জাসদ এর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইদ্রিস আল,ী জেলা ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসূল রাসেল, জেলা নদী, বন ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির সভাপতি আদিত্য মল্লিক প্রমূখ।
পথ সভায় বক্তারা বলেন, সাতক্ষীরার ২২ লক্ষ মানুষের প্রাণের প্রতিষ্ঠান সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। দুই প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের শেষ নেই। বিশেষ করে হাসপাতালে অনিয়মের পাশাপাশি রোগীদের ব্যাপক হয়রানির শিকার হতে হয়। হাসপাতালের পরিচালক ডা. শীতল চৌধুরী সপ্তাহে মাত্র দুই দিন অফিস করেন। ঠিকমত অফিসে আসেন না। অথচ কোটি টাকা মূল্যের ব্যক্তিগত গাড়ী কিনেছেন। বর্তমানে হাসপাতালের স্টাফদের বেতন ছাড়াতে গেলেও টাকা দিতে হয় ওই দুনীতিবাজ পরিচালক ডা. শীতল চৌধুরীকে। বর্তমানে সাতক্ষীরা মেডিকেলের অর্থপেটিক ওয়ার্ডে মাসের পর মাস রোগীরা ভর্তি থাকলেও অপারেশনের সিরিয়াল পায় না। ১০ জনের বেশি আলটাসনো গ্রাফি করা হয় না, ৫ জনের বেশি ইকো, ইসিজি হয় না। চরম অব্যবস্থাপনায় চলছে সাতক্ষীরা মেডিকেল।
মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা: রুহুল কুদ্দুস কলেজ যোগদানের পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে পৌছে গেছে। কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি ফি আদায় করা হয়, অর্থের বিনিময়ে ইচ্ছামত মাস্টার রোলের কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে তা আবার ইচ্ছামত নিয়োগ বাতিল করে রুহুল কদ্দুস। অবিলম্বে দুর্নীতিবাজ এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানান বক্তারা।
এছাড়া সাতক্ষীরা রাফসান গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক আবু হাসান কর্তৃক শহরের বিনেরপোতায় সরকারি সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করেছে। এটি নিয়ে ভূমিহীন সমিতির পক্ষ থেকে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলেও তা এখনো কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রকৃত ভুমিহীনদের ঘর দেওয়া হয় না। টাকা ছাড়া প্রকৃত ভুমিহীনরা ঘর পাই না। অবিলম্বে দখলকৃত সরকারি জায়গা উদ্ধার করে প্রকৃত ভুমিহীনদের পুনঃ বাসনের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান বক্তারা।
সম্প্রতি সাতক্ষীরায় নদী ও খাল খনন চলছে। এসব খাল ও নদী খননে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। কোটি কোটি টাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা খননের বরাদ্দ টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে পকেট ভরছে বলে বক্তারা জানান।
জেলায় কৃষি জমিতে ও ঘনবসতি ঘরবাড়ি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এলাকায় অপরিকল্পিত ভাবে স্থাপন হয়েছে একাধিক অবৈধ ইটভাটা। ইটভাটার কালো ধোয়ায় এলাকায় পরিবেশ দূষিত হয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক ইটভাটার মালিকদের নিবন্ধিত নেই। তারা পরিবেশ অফিসকে ম্যানেজ করে ইটভাটা পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর কোন পদক্ষেপ নেই না। তাই এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রনের জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানান বক্তারা।
বক্তারা আরো বলেন, সাতক্ষীরার একটি ঐতিহ্যবাহী কর্মমূখি প্রতিষ্ঠান সুন্দরবন টেক্সটাইলস মিলস। প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে সেখানে কর্মরত অনেক শ্রমিক আজ বেকার। শ্রমিকরা কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। কর্মহীন শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে অবিলম্বে পুতিষ্ঠানটি চালুসহ উচ্ছেদ হওয়া ভূমিহীনদের পূর্নবাসন, নদী ও খাল খননে অনিয়ম বন্ধ, বিনেরপোতা রাফসান গ্রুপের অবৈধ দখলকৃত সরকারি জায়গা উদ্ধার, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সীমাহীন অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে তোলা পরিবেশ দূষণকারী অবৈধ ইটভাটা বন্ধের জোর দাবি জানান বক্তারা।