স্টাফ রিপোটার : সাতক্ষীরা: চতুর্থ ধাপে ৩৪টি জেলার ৫৫ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ চলছে।এসব পৌরসভার ৭৯৩টি কেন্দ্রে একযোগে সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়; একটানা চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এদিকে সাতক্ষীরা পৌরসভায় সকাল ৮টা পযন্ত শান্তিপূণ ভোট গ্রহ হলেও সকাল ৯টার দিকে তিনটি কেন্দ্রে ভোট কারচুপির অভিযোগ উঠে। শহরে ৫নং ওয়াডে বাটকেখালি পুরুষ কেন্দ্রে বহিরাগতরা নৌকায় জোর করে ভোট দিতে ভোটারদের বাধ্য করে। একই অবস্থা মিয়াসাহেবর ডাঙ্গা প্রাইমারী কেন্দ্রে। ১ নং ওয়ডে মেঠপাড়া কেন্দ্রেও ভোট কারচুপির অভিযোগ উঠে। সকাল ৯টার দিকে একদল বহিরা গত কেন্দ্র ঢুকে পড়ে নৌকার পক্ষে ভোটার দের ভোট প্রয়োগে বাধ্য করে।পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সন্ত্রাসীরা ভোট কেন্দ্র ত্যাগ করে কেন্দ্রের বাইরে মিছিল শ্লোগান দিতে থাকে। এছাড়া সামগ্রীক ভাবে সকাল থেকে শান্তিপূণ ভাবে ভোট গ্রহণ চলছে। দুপুর একটা পযন্ত শান্তিপূণ ভাবে ভোটাররা তাদের ভোটাধীকার প্রয়োগ করেন।
৩৪টি জেলার ৫৫ পৌরসভার মধ্যে কাগজের ব্যালটের মাধ্যমে ২৬টিতে ও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ২৯টিতে ভোটগ্রহণ চলছে।এদিকে শুধু ভোটকেন্দ্রের পাহারায় ১০ হাজার ৩০৯ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। কেন্দ্রের বাইরের এলাকা পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের মোবাইল ও স্ট্রাইকিং টিমও রয়েছে।শনিবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইভিএম পৌঁছানো হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আজ রোববার সকালে বাকি ২৬ পৌরসভায় কাগজের ব্যালট পেপার পাঠানো হয়।
ইসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৫৫টি পৌরসভায় মেয়র পদে ২১৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে দুই হাজার ৭০ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬১৮ জন প্রার্থী আছেন। এসব পৌরসভায় ৭৯৩টি ভোটকেন্দ্র এবং ৪ হাজার ৮৮৯টি ভোটকক্ষ রয়েছে। ভোটার আছেন ১৬ লাখ ৬৭ হাজার ২২৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮ লাখ ৩২ হাজার ৪২৮ জন এবং নারী আট লাখ ৩৪ হাজার ৭৮৬ জন।
এদিকে চতুর্থ ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১৭টি পৌরসভায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এসব পৌরসভায় র্যাবের ১৭টি টিম এবং বিজিবির ২৭ প্লাটুন অতিরিক্ত সদস্য মাঠে নেমেছেন। এ নিয়ে কেন্দ্রের বাইরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোট হওয়া ৫৫টি পৌরসভায় পুলিশের ১৬৭টি মোবাইল ও ৫৫টি স্ট্রাইকিং এবং র্যাবের ১৬৭টি টিম নির্বাচনি এলাকায় রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি পৌরসভায় গড়ে দুই প্লাটুন বিজিবি এবং উপকূলীয় এলাকায় প্রতি পৌরসভায় এক প্লাটুন কোস্টগার্ড সদস্য রয়েছেন।
ভোটকেন্দ্রের পাহারায় মোতায়েন করা হয়েছে ১০ হাজার ৩০৯ জন সদস্য। এর মধ্যে অস্ত্রসহ ৩ হাজার ১৭২ জন পুলিশ সদস্য, এক হাজার ৫৮৬ জন অঙ্গীভূত আনসার এবং ৫ হাজার ৫৫১ জন লাঠিসহ আনসার মোতায়েন থাকছে।
এছাড়া নির্বাচনি এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে ৫০১ জন নির্বাহী ও ৫৫ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে রয়েছেন।
জানা গেছে, ৩ জানুযারি চতুর্থ ধাপে ৫৬টি পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করে ইসি। পরে সোনাইমুড়ি ও ত্রিশাল পৌরসভা এ ধাপে যুক্ত হয়। অপরদিকে হাইকোর্টের আদেশে নাটোর পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করা হয়।
ফেনীর পরশুরাম পৌরসভায় সব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা জয়ী হওয়ায় সেখানে ভোটের প্রয়োজন হবে না।
জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভা নির্বাচন কার্যক্রম বন্ধের পর ফের তা চালু হয়। এছাড়া সহিংস ঘটনায় মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভার ভোট স্থগিত করে কমিশন।
সবমিলিয়ে আজ ৫৫টিতে ভোট হচ্ছে। ২৭ জানুয়ারি থেকে এ ধাপের পৌরসভাগুলোয় শুরু হয় আনুষ্ঠানিক প্রচার। ইতোমধ্যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, লালমনিরহাট সদরসহ বিভিন্ন পৌরসভায় সহিংস ঘটনা ঘটে। বেশ কিছু পৌরসভা নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন ঘটে।
শনিবার নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার সাংবাদিকদের বলেন, ডিআইজি, ডিসি, এসপি ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের একই মেসেজ দেওয়া হয়েছে যে নির্বাচনে যেন অন্য কোনো কিছু না ঘটে। নির্বাচন কমিশন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। এজন্য যা যা করার, তা-ই করতে হবে-সেই নির্দেশনা দিয়েছি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা প্রতিটি ভোটকেন্দ্রকে গুরুত্ব দিচ্ছি।
বিগত নির্বাচনে যেসব অনিয়ম ছিল, এবার তা পুনরাবৃত্তি বন্ধে ইসির অবস্থান জানতে চাইলে সচিব বলেন, আগের বা পরের যে নির্বাচনের কথাই বলেন না কেন, নির্বাচন কমিশনের একটাই অবস্থান-সেটা হলো সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা। এ নির্বাচনে ‘ডোর টু ডোর পার্টিসিপেশন’ থাকে। তৃতীয় ধাপে দু-তিনটি জায়গায় সমস্যা হয়েছে।
কমিশন সেগুলোর বিষয়ে ওয়াকিবহাল। সেগুলোর প্রতিবেদন এসেছে। সেগুলো কমিশনের কাছে পেশ করা হবে। গোপন কক্ষে ভোটার ছাড়া তৃতীয় ব্যক্তিদের উপস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী যেন নির্বাচন পরিচালনা করা হয়, সেজন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে জেলা রিটার্নিং ও নির্বাচন কর্মকর্তা সকল আয়োজন সম্পন্ন করেছেন। শনিবার দুপুরের পর থেকে নির্বাচনী কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। পৌরসভার ৩৭টি কেন্দ্রই অধিক গুরুত্বপূর্ণ দেখিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত করা হয়েছে। সন্ধ্যায় জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা নাজমুল কবীর জানান, প্রতিটি কেন্দ্রে ১জন এসআই এর নেতৃত্বে ৪জন পুলিশ ও ৯জন আনসার সদস্য দেয়া হয়েছে। এছাড়াও একজন করে ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে ৯টি মোবাইল টিম ও ৩টি স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত থাকবে। একই সাথে ৩ প্লাটুন বিজিবি ও ২৪ জন র্যাব সদস্য ম্যাজিস্ট্রেট এর নেতৃত্বে টহল দিবেন। এছাড়াও একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন অতিরিক্ত। রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক্স ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এ ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।