আবু সাঈদ সাতক্ষীরা :সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাড়ে ৬কোটি টাকার প্যাক্স মেশিন ক্রয়ে দূর্ণীতি এবং কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা ম্যাটস ও আই এইচ টি’র আসবাবপত্র ও খেলার সামগ্রীসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ক্রয়ে সরকারের বিপুল পরিমান অর্থ অতিরিক্ত অপচয়ের অভিযোগে দায়েরকৃত দুদকের মামলার তদন্তকার্য অব্যাহত আছে। দুদক’র প্রধান কার্যালয় থেকে দুটি টিম সাতক্ষীরায় এসে মঙ্গল ও বুধবার তদন্তকার্য পরিচালনা করেছেন। দুদকের দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, অচিরেই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করার লক্ষে দ্রুতগতিতে তদন্তকাজ পরিচালিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরীক্ষা নীরিক্ষার সামগ্রীক তথ্য বছরের পর বছর জমারাখার জন্য (তথ্য ভান্ডার) প্যাক্স মেশিন ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন মেডিকেল হাসপাতালের তৎকালিন তত্ত্বাবধায়ক ডা. শাহাজান আলী। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দরপত্র আহবানপূর্বক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিযুক্ত করে মেশিন সরবরাহের পূর্বেই বিল পরিশোধের অভিযোগে বিষয়টি গণমাধ্যমে চাউর হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে প্রাথমিক তদন্তে মাঠে নামে দুদক। প্রাথমিক তদন্তে মেডিকেল হাসপাতালে উক্ত মেশিন না আসলেও বিল পরিশোধের সামগ্রীক কাগজপত্র জব্দ করেন দুদক। অনিয়মের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমানিত হওয়ায় বিগত ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর দুদক বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। দুদক মামলা নং-৯। এই মামলার বর্তমান তদন্তকারি কর্মকর্তা এডি রাকিবুল হায়াত মঙ্গলবার সাতক্ষীরায় আসেন। তিনি মঙ্গল ও বুধবার কয়েক দফায় সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিস ও মেডিকেল হাসপাতালে যান। ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টদের লিখিত বক্তব্য গ্রহণপূর্বক তদন্তকার্য সম্পন্ন করেন। তিনি জানান, স্বাস্থ্য খাতের আলোচিত এই মামলার তদন্তকার্য দ্রুতগতিতে চলছে। ক্রয়কৃত পণ্য প্রতিষ্ঠান না পেয়ে কীভাবে সরকারি অর্থ বিল পরিশোধ করলেন তার সঠিক জবাব এখানো মেলেনি। ফলে তদন্তকার্য শেষ হলেই অচিরেই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।
এদিকে অপর এক সূত্র জানান, দুদক’র এডি শহিদুর রহমান এসেছেন জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা মেডিকেল এ্যাসিসটেন্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) ও ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) এর আসবাবপত্র ও খেলার সামগ্রী ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগে দায়েরকৃত দুটি মামলার তদন্তকার্যে। দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, নলতা আইএইচটি’র শিক্ষার্থীদের খেলার জন্য বিপুল পরিমান খেলার সামগ্রী ক্রয় করা হয় বিগত ২০২০ সালে। তৎকালিন এই প্রতিষ্ঠানের চলতি দায়িত্বে থাকা সাবেক সিভিল সার্জন ডা. তৌহিদুর রহমানসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যোগসাজসপূর্বক অসৎ উদ্দেশ্যে বাজার মূল্যের চেয়ে কয়েকগুন বেশি দামে খেলার সামগ্রী ক্রয় করে অনিয়মের আশ্রয় নেন। বিষয়টি গণমাধ্যমে আসলে তদন্তে মাঠে নামে দুদক। দুদক’র প্রাথমিক তদন্তে খেলার সামগ্রী ক্রয়ে বাজার মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে ক্রয় করে সরকারের ২০ লাখ ৬১ হাজার ৩৫০ টাকা ব্যয় দেখান। এঘটনায় দুদক বাদী হয়ে ২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২)ধারাসহ দন্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ১০৯ ধারায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ কয়েকজনের নামে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৮।
এছাড়াও ম্যাটস এর আসবাবপত্র ক্রয়ে বাজার মূল্যের চেয়ে কয়েকগুন বেশিদামে আসবাবপত্র ক্রয়ের অভিযোগ দুদকের প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়। দুদক’র প্রাথমিক তদন্তে এই কেনাকাটায় সরকারের অতিরিক্ত ৯৮ লাখ ২হাজার ৮১০ টাকা ব্যয় দেখিয়ে নিজেরা হাতিয়ে নেয় বলে প্রমাণ পায়। ফলে দুদক বাদী হয়ে বিগত ২০২০ সালের ৩জুন দ-বিধির ৪০৯, ৪২০, ২১৮ ও ১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলা দায়ের করেন। আলোচিত এই দুটি মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা দুদক’র এডি শহিদুর রহমান মঙ্গলবার সাতক্ষীরায় আসেন। তিনি মঙ্গল ও বুধবার এসব বিষয় নিয়ে তদন্তকার্য পরিচালনা করেছেন। একই সাথে এই তদন্তকার্য পরিচালনায় সহয়তার জন্য ডা. মো: মেহেদী হাসান, ডা. শেখ আকছেদুর রহমান, ডা. মো: আব্দুল লতিফ, ডা. শেখ তৈয়েবুর রহমান ও স্টোরকিপার মামুনুর রশিদকে উপস্থিত থাকতে দুদক’র পক্ষ থেকে বার্তা দেওয়া হয়। দুটি মামলায় ১৬ ও ১৭ আগস্ট তাদের উপস্থিত থাকতে ৮ আগস্ট এই পত্র দেন দুদক।
এসব বিষয় নিয়ে দুপুরে দুদক’র এডি রাকিবুল হায়াতের সাথে কিছু কথা হয়। তিনি সীমিত কিছু কথা বলে পরে জানাবেন বলে জানালেও আর যোগাযোগ করা যায়নি।