নিজস্ব প্রতিবেদক:: জলাবদ্ধতার সাতক্ষীরা অঞ্চলের অন্যতম সমস্যা। পুতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষের জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে সরকার সাতক্ষীরার উপর দিয়ে প্রবাহিত বেতন নদীর দুই তীরে তৈরি করা হয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। এই বাঁধের মাটি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ইটভাটায়। একশ্রেণীর মাটি চোরেরা বিনেরপোতা-রাজনগর এলাকায় বেতনা নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে ৪০ থেকে ৫০ ফুট গভীর করে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটছে। বিক্রি করছে ইটভাটায়। প্রতিদিন ৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা মাটি বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সুইডেন ওরফে ছোট বাবু ও মুক্তো।
বাবু ও মুক্তোর মাটি লুট চক্রের ফাঁদে জিম্মি হয়ে পড়েছে এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষ। স্কেভেটর বা ভেকুসহ মাটি কাটার ভারি যন্ত্রপাতি দিয়ে রাত দিন মাটি কেটে ভরা হচ্ছে ট্রাক। ট্রাকের পর ট্রাক মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। বাদ যাচ্ছে না বন্য নিয়ন্ত্রণ ভেড়ি বাঁেধর মাটি কাটাও। সাতক্ষীরা সদরের লাবসা ইউনিয়নের বৃহৎ রাজনগর গ্রাম সহ পাশাপাশি আরো কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষের একমাত্র যাতায়াত পথ বন্ধ হয়ে গেছে। অন্য রাস্তায় ঘুরে তাদের সাতক্ষীরা শহর ও বাজার ঘাটে যেতে হচ্ছে। মাটি চোরেরা পাল্টে দিয়েছে এলাকার চিত্র। যতদূর চোখ যায় শুধু খাঁ খাঁ বিরানভূমি আর গভীর খানাখন্দে ক্ষতবিক্ষত বাঁধ ও চলাচলের রাস্তা। বেহাল চিত্রই দৃশ্যমান। চালাচালকারী ট্রাকের ধুলোর যন্ত্রণায় অস্থির গ্রামবাসী। পথচারীদের পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। ধুলাবালি কারণে পরিবেশ নেমে এসেছে বিপর্যয়। মানুষের বাড়িঘর ও গাছপালা ধুলায় আচ্ছন্ন। বাতাসে ধুলোবালি ওড়াার কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসী। মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করছে। দেখা দিয়েছে এই এলাকার মানুষের ম্বাসকষ্ট ও বিভিন্ন রোগবালাই। তারা সর্দি-জ্বর-কাশি নিউমোনিয়া, ফুসফুসের ব্যথা সহ নানান ব্যধিতে ভুগছে। এখানে দিন দিন বায়ু দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। জনস্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতির প্রভাব বাড়ছে।
মাটি কাটার ভারি যন্ত্রপাতির অনর্গল শব্দ আর মাটি বহনকারী ট্রাকগুলোর অবিরাম ছুটে চলা গোটা এলাকার পরিবেশকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। বেড়েছে শব্দ দুষণ। সরকারের কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও মাটি লুটেরারা মানছে না সে আইন। মাটির চোরেদের কথা হলো, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ডিসি অফিস, উপজেলা নির্বাহী অফিস ও অন্যান্য দপ্তরের অনুমতি নিয়েই তারা মাটি কাটছে। এসব জায়গায় মাটি বিক্রি টাকার একটি ভাগ দিতে হয়। রাজনগরবাসীদের অভিযোগ, এ ব্যাপারে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের রহস্যজনকভাবে নীরব ভূমিকা পালন করছে।
বছরের-পর-বছর এভাবে মাটি চোরেরা মাটি চুরি করে যাচ্ছ। প্রকাশ্যে মাটি কাটা হলেও কারোর বাঁধা দেওয়ার সাহস নেই। কেউ প্রতিবাদ করলে মাটি চোরদের দেখাশোনা দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার রবি তাদের ভয় দেখান। মাটির চোরের মূল হোতা সুইডেন ওরফে ছোট বাবু ও মুক্তো। সংবাদ কর্মীরা ছবি তুলতে গেলে কর্মরত ম্যানেজার রবি মোবাইল ফোনে তাদেরকে জানালে মোবাইল ফোনে মুক্ত ও সুইডেন ছোট বাবু সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। সাংবাদিকদের মোবাইল ফোনে হুমকি দেয়। বিভিন্ন অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে। মুক্ত ও সুইডেন ছোট বাবুর দাবি, প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে মাটি কাটছি। কোন সাংবাদিক আমাদের ওখানে যায় না এবং সাহসও পায় না।
মুক্তো ও সুইডেন ছোটবাবু বিভিন্ন অপরাধ ও অপকর্মের শিরোমণি। তাদের এই অপকর্মের অভিযোগের শেষ নেই এলাকাবাসীর। তাদের আছে বিশাল বাহিনী। এ বাহিনী দিয়ে এলাকায় দখলদারিত্ব ও রামরাজত্ব কায়েম করেছে। ফসলের জমি সহ রাস্তার বাঁধ ও অন্যান্য জমি দখল করে মাটি উত্তোলন করে মোটা অংকের টাকায় বিক্রি করছে। সরেজমিনে দেখা যায়, বেতনা নদীর মধ্যে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। রাস্তার ওপর মাটি কাটার যন্ত্র বসিয়ে ৪০ থেকে ৫০ ফুট গভীর করে মাটি কেটে ট্রাকে করে বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। এলাকার বসবাসরত কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা মাটি বিক্রি করছে তারা।
এলাকাবাসী জানায়, সাংবাদিকরা আসে ছবি তোলে নাকি সেলফি তোলেন জানিনা। রাস্তা কেটে যেভাবে মাটি বিক্রি হচ্ছে তা দ্রæত বন্ধ হওয়া দরকার। তা না হলে বর্ষা মৌসুমে রাস্তা ধসে পড়বে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন বাঁধা দিলে গেলে চোরচক্রের সন্ত্রাসীরা হুমকি ও ভয়ভীতি দেখায়। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাদিউর রহমান কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলাকার অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন এবং মাটি কাটতে নিষেধ করেন। তার কথা কেউ শুনেনি। তারা বলেছে ওপরের মহল থেকে অনুমতি নিয়েই মাটি কাটছে। বিষয়টি তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে বলেছেন। তিনি এ ব্যাপারে কেন ব্যবস্থা নেননি কেনো তিনি বলতে পারেননি। সর্বশেষ তিনি ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর তারিখে সাতক্ষীরা সদর থানায় নিজে বাদী হয়ে তাদের নামে মামলাও করেছেন। তারপরেও প্রশাসন যদি ব্যবস্থা না নেয় তার করার কিছু নেই। সাদিউর রহমান বলেন, তারা চাকরি করেন, বাইরে থেকে এসেছেন। তাদের নিজেদের নিরাপত্তা নেই। তাদের জীবনের নিরাপত্তা কে দেবে?
পূর্ববর্তী পোস্ট