জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাকিস্তান সফরের সময় তোলা ছবি নিয়ে অ্যালবাম তৈরি করবে পাকিস্তান। ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকি সোমবার এ তথ্য জানান।
রাজধানীর কসমস সেন্টারে চলমান দুই মাসব্যাপী চিত্র প্রদর্শনী ‘শেখ হাসিনা: অন দ্য রাইট সাইড অব হিস্ট্রি’ দেখতে এসে তিনি বলেন, ‘আমি এগুলো থেকে একটি অ্যালবাম তৈরির জন্য সব ছবি সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। এটি আমাদের দুই দেশের ঐতিহাসিক সংরক্ষণশালার অংশ হয়ে থাকবে।’
কসমস গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ জামিল খান হাইকমিশনারকে স্বাগত জানান এবং প্রদর্শনীর বিষয়ে অবহিত করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে লাহোরে ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন। পরে ওই বছরের ২৭-২৯ জুন তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টো বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন।
পাকিস্তান হাইকমিশনার জানান, ওই সময় বেশ কিছু ছবি তোলা হয়েছিল এবং সে ছবিগুলো সংগ্রহ করা হচ্ছে।
প্রদর্শনীর শিল্পকর্মগুলোকে ‘অসাধারণ’ হিসেবে অভিহিত করে পাকিস্তানের হাইকমিশনার বলেন, যারা এখনো এই প্রদর্শনী দেখতে আসেনি তাদের এগুলো দেখতে আসা উচিত এবং তারাও এর প্রশংসা করবেন।
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি শিল্পকর্মের সঙ্গে জড়িত আবেগ এবং সংবেদনশীলতার মাত্রা- সবকিছুই প্রশংসনীয়। এমন প্রচেষ্টা নেয়ায় আমরা কৃতজ্ঞ।’
হাইকমিশনার সিদ্দিকি বলেন, দুই দেশ শুধু পারস্পরিক ইতিহাস নয়, শৈল্পিক ঐতিহ্যও বহন করে। ইতিহাসে যা ঘটে গেছে তা সত্ত্বেও এটি রক্তে বহমান। একে অপরের জন্য এই অনুভূতি এবং শুভ কামনা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি জানান, তিনি কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের প্রবাসীদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও পরিবার তৈরি হতে দেখেছেন। আমাদের শেকড় যে একই তার এক ভালো উদাহরণ এটি।
হাইকমিশনার বলেন, আমি আমাদের শিল্পীদের মধ্যে আরও নিবিড় মিথস্ক্রিয়াকে সহজ করতে কাজ করতে চাই। এটি পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং বন্ধুত্বের জন্য দরকারি হবে। এ ক্ষেত্রে আপনাদের সব প্রচেষ্টাতে আমাকে পাবেন।
ক্যালিগ্রাফি সম্পর্কে বলতে গিয়ে হাইকমিশনার সিদ্দিকি বলেন, ‘ইংরেজি এবং আরবি লিপি উভয় অনেক দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। শিল্পীরা এ শিল্পরূপকে নতুন মাত্রা দিচ্ছেন। এ নিয়ে আমার নিজস্ব সংগ্রহ আছে এবং আপনারা চাইলে আমি এখানে এটি প্রদর্শন করতে পারলে খুব খুশি হব।’
এর আগে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী, ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান, মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার, ইরানের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ রেজা নফর ও ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত ফাম ভিয়েত চিয়েন এ শিল্প প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন।
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আনুষ্ঠানিকভাবে এ শিল্প প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।
কসমস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় গ্যালারি কসমস সম্প্রতি কসমস আতেলিয়ার৭১-এর সঙ্গে যৌথভাবে বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে এক আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করে।
ক্যাম্পে প্রখ্যাত শিল্পী অলকেশ ঘোষ, আহমেদ শামসুদ্দোহা, শেখ আফজাল, নাসির আলী মামুন, বিশ্বজিৎ গোস্বামী, রত্নেশ্বর শুত্রধর, রাসেল কান্তি, মনজুর রশিদ, সৌরভ চৌধুরী, মানিক বনিক, জয়ন্ত সরকার, আজমল হোসেন, ফিদা হোসেন, অমিত নন্দী, দিদারুল লিমন, তামান্না আফরোজ, ফাহিম চৌধুরী, মিসকাতুল আবির, প্রসূন হালদার, হাসুরা আক্তার রুমকি ও সুরভী আক্তার অংশ নেন।
আর্ট ক্যাম্পে অংশ নিয়ে তাদের আঁকা শিল্পকর্মগুলো দিয়েই প্রদর্শনীটি করা হচ্ছে।
কসমস সেন্টারে প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি অব্যাহত থাকবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এখানে একসঙ্গে ২০ দর্শনার্থী পরিদর্শনের সুযোগ পাচ্ছেন। পরিদর্শনের সময় দর্শনার্থীদের সব সময় মাস্ক পরে থাকা এবং পরস্পর থেকে যথাযথ দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে।
খবর: ইউএনবি।