নিজস্ব প্রতিনিধি : চোরা ছবির প্রতারক এস এম বাদসা মিয়াকে আটক করেছে পুলিশ। ১মে শনিবার ভোর রাতে সাতক্ষীরা শহরের বাইপাস সড়ক এলাকা থেকে আটক করা হয়।
আটক বাদসা মিয়া রিজেন্টের মহাপ্রতারক সাহেদের মতোই জেলায় ব্যক্তি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হুমকি দিয়ে অবৈধ সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছে। সংক্রান্ত বিষয়ে গত ২৯ এপ্রিল সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান সতর্ক থাকতে সাতক্ষীরা ডিস্ট্রিক্ট পুলিশের ফেসবুক পেইজে এক স্টাটাসের মাধ্যমে আহ্বান জানান।
জানা গেছে, কথিত ডাঃ বাদশা মিয়ার পিতা সাতক্ষীরার পলাশপোল এলাকার নূর ইসলাম ছিলেন হাতুড়ে ডাক্তার এবং আপন ছোট ভাই মামুন হোসেন সাতক্ষীরা জেলার বড় মাদক(ইয়াবা) এর হোলসেলার। তার পিতা কবিরাজি ওষুধ দিয়ে পাইলসের ভুয়া চিকিৎসা করতেন। প্রতারক বাদশার কোন পেশা বা ইনকাম নেই। প্রতারণা করে অর্থ আদায় করাই তার মূল ব্যবসা। তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করতে গিয়ে ভয়ঙ্কর আরেক শাহেদের সন্ধান পাওয়া যায়। সে নিজেকে ডাক্তার দাবি করে যদিও তার ডাক্তারি সার্টিফিকেট নেই এবং তিনি ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, কেন্দ্রীয় সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ইত্যাদি ইত্যাদি হিসাবে নিজেকে প্রতীয়মান করে, বিভিন্ন মানুষকে টাকার বিনিময়ে চাকরিতে পদন্নতি, চাকুরী পাইয়ে দেওয়া এমন কি যে কোন মামলার সুরাহা করে দিতে পারবেন মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়েছে। এছাড়া তিনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টর পরিচয় দিতেন।
সম্প্রতি সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে ভূয়া সাংবাদিক মোবাইল থেকে কালীগঞ্জ থানার সরকারি নাম্বার কল দিয়ে নিজেকে দৈনিক মানবাধিকার প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক ও ভুঁইফোড় সংগঠন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগার কেন্দ্রীয় সংসদের প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক পরিচয় দিয়ে বলেন উক্ত সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টর ডাঃ বাদশা মিয়া স্যার কথা বলবেন। বাদশা মিয়া ওসি দেলোয়ার হোসেন কে নছু বিবিসহ তার মেয়েদের মিথ্যা মামলায় অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়ে ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়ার হুকুম দেয়। ওসি দেলোয়ার হোসেন বলেন মামলা তদন্ত চলমান রয়েছে, আপনি প্রয়োজন হলে এসপি মহোদয়ের সাথে কথা বলেন। কিন্তু তিনি(বাদশা) কোর্ট খুল্লে ওসির বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন কোর্টে মিথ্যা মামলা করবেন বলে ভয়-ভীতি দেখান এবং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ সম্বলিত খুলনা-০২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য এর প্যাডে লিখিত অভিযোগ খুব শ্রীর্ঘই আইজিপি বরাবর পাঠানোর কথা বলে হুমকি-ধমকি দিয়ে তার বাহাদুরি দেখানোর চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে ওসি দেলোয়ার হোসেন নিশ্চুপ হয়ে বাদশার কথা শুনতে থাকেন এবং এসপি মহোদয় সাথে কথা বলার কথা বলে ফোন কেটে দেয়।
গত এপ্রিল দুপুরে পুলিশ সুপার ফেসবুক পেইজে কথিত ডাঃ বাদশা মিয়াকে নিয়ে সতর্কতামূলক স্টাটাস দেন। পরবর্তীতে এর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রাতেই শহরস্থ লেকভিউ মোড়ে জৈনক শহিদুল ইসলামের মুদি দোকানে রাতে অভিযান চালিয়ে দু’টি নকল সীল, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব লেখা একটি নকল নোট প্যাড, খুলনা-০২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য এর নকল ডিও লেটার/প্যাডে ওসি দেলোয়ার হোসেনের নামে লিখিত মিথ্যা অভিযোগ সহ ভিভিন্ন প্রকার নিয়োগ পত্র এবং জমাজমি সংক্রান্ত কাগজ-পত্র, ওসি দেলোয়ার হোসেন বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনের লিখিত কপি উদ্ধার করা হয়। এদিকে তার বিরুদ্ধে পুলিশের তৎপরতার খবর পেয়ে আত্মগোপনে চলে যায় কথিত ভুঁইফোড় সংগঠনের পরিচয়দাতা ডাঃ বাদশা মিয়া। যদি শেষ রক্ষা হয়নি শনিবার ভোরে বাইপাস সড়ক এলাকা থেকে তাকে আটক করে সাতক্ষীরা পুলিশ।
সাতক্ষীরা সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত)বুরহান উদ্দীন তাকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান আজ শনিবার বেলা ১১টায় প্রেস বিফ্রিংয়ের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে।
পূর্ববর্তী পোস্ট