ফিরোজ হোসেন , সাতক্ষীরা ঃ
সাতক্ষীরা কলারোয়ায় একই পরিবারের চারজনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত চাঞ্চল্যকর মামলার একমাত্র আসামী রায়হানুর রহমানকে মৃত্যুদন্ডের রায় প্রদান করেছে আদালত। মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ১১ টা ৪৫ মিনিটে সাতক্ষীরার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক শেখ মফিজুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।
এদিকে চাঞ্চল্যকর এ মামলায় রাষ্ট্র পক্ষের পিপি এড. আব্দুল লতিফ বলেন, যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে আদালতকে আসামী রায়হানুর রহমান দোষী সাব্যস্ত করতে সক্ষম হয়েছি বলে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মুত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। যুগান্তকারী রায় হয়েছে। এই রায়ে রাষ্ট্র পক্ষ সন্তুষ্ট প্রকাশ করেন। তবে আসামী পক্ষের সিনিয়র আইনজীবী এস এম হায়দার এ রায়ে সন্তুষ্ট নন বলে জানান।
এস এম হায়দার আলী জানান, হত্যার শিকার শাহিনুর থানায় যাদের বিরু্েদধ জীবননাশের আশঙ্কা করে জিডি করেছিলেন,সে বিষয়টি আমলে নেননি আদালত।এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে যাবেন বলে জানান সাতক্ষীরার জ্যেষ্ট আইনজীবী এড. হায়দার আলী।
ঘটনার বিবরনে জানা যায়, কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলিষা গ্রামের শাহজাহান ডাক্তারের ছোট ছেলে রায়হানুর রহমান (৩৬) বেকারত্বের কারনে বড় ভাই শাহীনুরের সংসারে খাওয়া দাওয়া করতো। শারীরিক অসুস্থতার কারনে কোন কাজ না করায় গত বছরের ১০ জানুয়ারি স্ত্রী তালাক দেয় রায়হানুর রহমানকে। সংসারে টাকা দিতে না পারায় শাহীনুরের স্ত্রী দেবর রায়হানুরকে মাঝে মাঝে গালমন্দ করতো। এরই জের ধরে গত বছরের ১৪ অক্টোবর রাতে ভাই শাহীনুর রহমান (৪০), ভাবী সাবিনা খাতুন (৩০), তাদের ছেলে ব্রজবক্স সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র সিয়াম হোসেন মাহী (১০) ও মেয়ে একই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী তাসমিন সুলতানাকে (৮) কোমল পানীয় এর সাথে ঘুমের বাড়ি খাওয়ায় এ মামলার একমাত্র আসামী রায়হানুর রহমান (৩৬)। এরপর ভোর চারটার দিকে হাত ও পা বেঁধে তাদেরকে একে একে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এ সময় তাদের ৪ মাসের শিশু মারিয়াকে হত্যা না করে তাকে লাশের পাশে ফেলে রেখে যায়।
এ ঘটনায় নিহত শাহীনুরের শাশুড়ি কলারোয়া উপজেলার উফাপুর গ্রামের রাশেদ গাজীর স্ত্রী ময়না খাতুন বাদি হয়ে কারো নাম উল্লেখ না করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তে নেমে সিআইডি সন্দিগ্ধ আসামী হিসেবে শাহীনুরের ভাই রায়হানুর রহমান, একই গ্রামের রাজ্জাক দালাল, আব্দুল মালেক ও ধানঘরা গ্রামের আসাদুল সরদারকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত রায়হানুরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ২১ অক্টোবর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম বিলাস মন্ডলের কাছে রায়হানুর নিজেই হত্যার দায় স্বীকার করে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। নিহত পরিবারে বেঁচে থাকা একমাত্র শিশু মারিয়া বর্তমানে হেলাতলা ইউপি সদস্য নাছিমা খাতুনের কাছে বড় হচ্ছে। গত ২৪ নভেম্বর মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সিআইডি’র পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম আসামী রায়হানুর রহমানের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ মামলায় গত ১৪ জানুয়ারি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।