নিজেস্ব প্রতিবেদক ,সাতক্ষীরা:
খননের মাত্র ৪ বছরের মধ্যে নাব্যতা হারাতে বসেছে কপোতাক্ষ নদ। পাড় দখল করে সবজি ও ধান চাষ,স্থাপনা নির্মাণ, নেট-পাটা দিয়ে মাছ ধরাসহ দখলদারিত্বের কারণে নাব্যতা কমতে শুরু করেছে এ নদে। এছাড়া পলির ঢলে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদের তলদেশ। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই আবারো জলাবদ্ধ হয়ে পড়ার আশঙ্কা নদতীরবর্তী এলাকা।
কপোতাক্ষ নদের ওপর জীবন-জীবিকা নির্ভর করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চালের তিন জেলার প্রায় ৫০ লাখ মানুষের । ২০০০ সালের পর এককালের প্রমত্ত নদ কপোতাক্ষ নাব্যতাহীন হয়ে পড়ে। স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় যশোর জেলার মনিরামপুর,কেশবপুর,সাতক্ষীরার তালা ও পাইকাগাছা এবং খুলনার পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলায়। সীমাহীন দূর্ভোগে পড়ে ৬ উপজেলার ৬লক্ষাধিক মানুষ।
কপোতাক্ষ অববাহিকার মানুষের দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রামের পর ২০১১ সাল থেকে কপোতাক্ষ খনন শুরু হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়,যশোরের চৌগাছা এলাকায় ভৈরব নদ থেকে কপোতাক্ষ নদের উৎপত্তি। ১শ’৮০ কি.মি. দীর্ঘ নদটি সাতক্ষীরার কলারোয়া ও তালা উপজেলা হয়ে খুলনার পাইকগাছা ও কয়রার মধ্য দিয়ে আবারও সাতক্ষীরার খোলপেটুয়া নদীতে মিশেছে।
২০১১ সালের জুলাই মাসে একনেকের বৈঠকে কপোতাক্ষ নদ খননের জন্য ২৬১ কোটি ৫৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। চার বছর মেয়াদী এই প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারন করা হয় ২০১৫ সালের জুন মাস পযর্ন্ত । তবে তিনবছর বাড়তি সময় নিয়ে খনন কাজ শেষ হয় ২০১৮ সালের জুন মাসে।
কপোতাক্ষ খননের ৪ বছরের মধ্যে আবারো কপোতাক্ষ আবারও তার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে শুরু করেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কপোতাক্ষের দু’তীর এখন ভূমিদস্যুদের দখলে। কেউ সবজি ও বোরো ধান চাষ করছেন, কেউবা স্থাপনা তৈরি করছেন। আবার কেউবা নেটপাটা দিয়ে মাছ ধরার কারণে পলি জমে ছোট হয়ে যাচ্ছে কপোতাক্ষ নদ।
নদের তীরে সবজি চাষ করছেন তালা উপজেলার চরগ্রাম গ্রামের তারাপদ দাস। নদের তীরে সবজি চাষ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,এটা আমাগির বাপুতি জমি। ভাঙতি ভাঙতি একিন আইছে। নিজেগের জমি,তাই চাষ-বাস করি।
নেটপাটা দিয়ে মাছ ধরছেন চরগ্রামের অলোক দাস। এবিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,‘‘সব সময় ধরিনি। কাজ-কাম যহন কম থাকে,সেই টাইমে আসি। খাবার জন্যি কডা মাছ হলিই চলে।’’
তালার স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী শফিকুল ইসলাম জানান,চরগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় নেট-পাটা দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। খুটি বা আটকানো স্থানে পলি জমতে জমতে নদ সরু হয়ে যাচ্ছে।
নদের নাব্যতা কমে যাওয়া প্রসঙ্গে জেলা পানি কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী জানান, সাতক্ষীরার প্রধান নদ কপোতাক্ষ। স্থানীয়দের আন্দোলনের ফলে কপোতাক্ষ খননের জন্য একনেক বৈঠকে বিপুল টাকা বরাদ্দ হয়। তবে সেই সময় কপোতাক্ষ নদের সীমানা নির্ধারণ করা হয়নি। এই জন্য কপোতাক্ষের পাশের জমিওয়ালারা কপোতাক্ষ দখল করে নিচ্ছে। সরকারের উচিৎ সীমানা নির্ধারণ করা । তাহরে নদী দখল হবেনা। পাশাপাশি পলি না জমে যাতে নদের তলদেশ ভরাট না হয়,সেজন্য তিনি টিআরএমের (টাইডাল রিভারাইন ম্যানেজমেন্ট) ওপর জোর দেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, কপোতাক্ষ নদের ওপর তিন জেলার মানুষের জীবন-জীবীকা জড়িত। তাই এই নদকে বাচিয়ে রাখতে হবে। পলি জমে কপোতাক্ষের তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সমীক্ষা করে ড্রেজিংয়ের জন্য প্রকল্প প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। অনুমোদিত হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কপোতাক্ষ পাঁড়ের দখলদারদের উচ্ছ্বেদে অভিযান চালানোর আশ্বাস সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির।
তিনি বলেন,কপোতাক্ষ মাইকেল মধুসুদন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত নদ। কয়েক বছর আগে সরকার এটি খনন করে। পরবর্তীতে পলি জমে নাব্যতা হৃাস পাচ্ছে। নদ দখলের যে অভিযোগ উঠেছে,অভিযোগ খতিয়ে দেখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।