ফিরোজ হোসেন, সাতক্ষীরা
পরপর দু’টি ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়ন। ভিটে মাটি হারায় মানুষ, ভেসে যায় মৎস্য ঘের, সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় অনেকেই।
ভেঙে পড়ে পুরো যোগাযোগ ব্যবস্থা।ফসলি জমি, ঘের বিলীন হয়ে যায় নদীগর্ভে। প্রতাপনগর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে হাওলাদার বাড়ি ও দরগাহতলার আইট গ্রাম দু’টি। নদীতে বিলীন হয়ে যায় ৪০টি পরিবারের বসতভিটা, মসজিদ ও কবর স্থান।
বাজার ঘাট, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত রাস্তাটি পরিণত হয় বিশাল খালে। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থায় মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে। স্থানীয়রা পড়েন চরম দুর্ভোগে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের দৈনিক ২০ টাকা খরচ হতো নৌকায় পারাপারে। একটি মাত্র নৌকায় পার হতে হতো ৪০০ পরিবারকে।
স্থানীয়দের এ দুর্ভোগ লাঘবে এগিয়ে আসে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ডু সামথিং ফাউন্ডেশন’।
সংগঠনটি দুর্গম প্রতাপনগরের হাজারো মানুষের যাতায়াতের কষ্ট লাঘবে তৈরি করে দিয়েছে একটি ভাসমান সেতু।
৫৬টি ড্রাম দিয়ে তৈরি ৩৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের ভাসমান সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষে গত ২৮ মার্চ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এখন দৃষ্টিনন্দন এ ভাসমান সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে পেরে উচ্ছ্বসিত স্থানীয়রা।
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক সাইদুল ইসলাম বলেন, যে স্থানে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে ছিল ৪০টি পরিবারের বসতভিটা, মসজিদ ও কবর স্থান। সব কিছু নদীতে বিলীন হয়ে তৈরি হয় গভীর খাল। যাতায়াতের পথ ছিল না। সেতুটি তৈরি হওয়ায় মানুষের অনেক উপকার হচ্ছে।
ডু সামথিং ফাউন্ডেশনের সভাপতি ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো কোনো রাস্তা এখানে ছিল না। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের দৈনিক ২০ টাকা খরচ হতো নৌকায় পারাপারে। একটি মাত্র নৌকায় পার হতে হতো ৪০০ পরিবারকে। কি যে কষ্ট ছিল, সেটা কেবল এ অঞ্চলের মানুষই বুঝতে পারত। মানুষের কষ্ট লাঘবে এ সেতুটি তৈরি করা হয়েছে। ভাসমান সেতুটি বিছিন্ন দু’টি গ্রামকে সংযুক্ত করেছে ইউনিয়নের সঙ্গে। এখন মানুষ নির্বিঘ্নে যেতে পারছে বাজার-ঘাট, স্কুল, কলেজ, মসজিদ ও হাসপাতালে। উপকূলীয় অঞ্চলে জোয়ার-ভাটা হয়। এটি এমনভাবে নির্মিত, যাতে পানির উচ্চতা বাড়লে সেতু ওপরে ভাসবে। সব মিলিয়ে এটি মানুষের উপকারে আসবে বলে আমরা মনে করছি।