বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছে, সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি, অনিয়ম ও বাজার সিন্ডিকেটের কারণেই দেশে ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে এবং মূল্যস্ফীতি এখন অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এতে প্রমাণ হয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে সরকারসংশ্লিষ্টদের বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে।
তিনি অবিলম্বে ভোজ্যতেলসহ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে করে বাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। অন্যথায় সরকারকে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত ভোজ্যতেলসহ দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতির প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে এক বিক্ষোভ-পূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
বিক্ষোভ মিছিলটি মিরপুর-১০ গোল চত্বর থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শেওড়া বাসস্ট্যান্ডে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম, মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ডা: ফখরুদ্দীন মানিক, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য জিয়াউল হাসান, জামাল উদ্দীন ও ইয়াছিন আরাফাত, শিবিরের ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, ও পশ্চিমের সভাপতি সাব্বির বিন হারুন প্রমুখ।
ড. এম আর করিম বলেন, সরকারের রহস্যজনক নীরবতার কারণেই অবৈধ মজুতদাররা ভোজ্যতেলের বিপুল মজুত করে তুলেছে। আর আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ও ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাতে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। কথিত সঙ্কটের অজুহাতে একদিনের সয়াবিন তেলের মূল্য প্রতি লিটারে প্রায় ৪০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে প্রতি লিটার সয়াবিন এখন কিনতে হচ্ছে ২ শ’ টাকারও বেশি দামে। মূলত, রিফাইনারি কোম্পানিগুলো চাহিদা মতো তেল সরবরাহ করছে না। প্রতিদিন ১, ২ ও ৫ লিটার মিলিয়ে ৮ শ’ থেকে হাজার লিটারের চাহিদা থাকলেও কোম্পানি থেকে ৩ শ’ থেকে ৪ শ’ লিটারের বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। তেল লুকিয়ে রেখে মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগও উঠেছে সরবারাহকারীসহ বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু এসব অনিয়মের সাথে সরকারসংশ্লিষ্টরা জড়িত থাকার কারণেই সরকার তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না।
তিনি বলেন, দেশে মূল্যস্ফীতি এখন সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। চাল, ডাল, তেল, আটা, লবণ, চিনি, ডিম, গোস্ত ও তরিতরকারিসহ সবকিছুতেই অগ্নিমূল্য। মাত্র ১ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে জনদুর্ভোগ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেলেও সরকারের মন্ত্রীরা জনগণের অসহায়ত্ব নিয়ে রীতিমত তামাশায় লিপ্ত হয়েছেন। তাই এই গণবিরোধী সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি গণপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যেকোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি আরো বলেন, সরকার নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতেই দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা ২০১৪ ও ২০২২ সালে নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতির করার পর আগামী নির্বাচনের ভোট চুরির নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সরকার নির্বাচন কমিশনের কোন তোয়াক্কা না করেই আগামী নির্বাচনে সকল আসনে বিতর্কিত ইভিএম মেশিনের ব্যবহারের মাধ্যমে আবারো জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে চায়। কিন্তু সচেতন জনতা সরকারের সে পরিকল্পনা কখনোই বাস্তবায়িত হতে দেবে না। তিনি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দলনিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। অন্যথায় রাজপথে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মাধ্যমে জনগণই নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে। প্রেস বিজ্ঞপ্তি