আবু সাঈদ সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরায় বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে জেলার অন্তত ২৫ লক্ষ মানুষ। প্রতনিয়ত সন্ধ্যার পর থেকে সাতক্ষীরা শহর পরিণত হচ্ছে ভুতুড়ে শহরে। দেশে জ্বালানি সাশ্রয়ে সারা দেশের মত লোডশেডিংয়ের সময় সূচী (রুটিন) অনুযায়ী সাতক্ষীরায় চলতে পারছে না বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এর একটি প্রতিষ্ঠান ওজোপাডিকো (পিডিবি) এবং সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। প্রতিদিন ভোর, দুপুর এবং রাতে দুই থেকে তিন ঘন্টা লোডশেডিং দেওয়ার কথা থাকলেও দিনে ও রাতে মিলিয়ে ৫/৭ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। আর বাকী সময় বিদ্যুৎ থাকছে । এ কারনে প্রচন্ড গরমে মানুষের দুর্ভোগ সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বিশেষ করি শিশু বাচ্চা ও অসুস্থ রোগীরা । তিমাত্রায় লোডশেডিংয়ের কারনে জেলার শিল্প কলকারখানা গুলোতে বিরাজ অচলাবস্থা। বরফ কলগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে চিংড়ি ও মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায়। জেলার বিদ্যুৎ নির্ভর হিমাগারগুলোতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। বিদ্যুৎ না থাকায় এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে হারিকেন ও মোমবাতি জ¦ালিয়ে লেখাপড়া করতে বাধ্য হচ্ছে। সাতক্ষীরা জেলায় ৪টি ছোট বড় হিমাগার রয়েছে। হিমাগার গুলোর মধ্যে বাঁকাল কোল্ড স্টোরেজ, ইটাগাছা সংগ্রাম কোল্ডস্টোরেজ। কাটিয়া কোল্ড স্টোরেজ এবং কলারোয়া কোল্ড স্টোরেজ গুলোতেও থাকছে লোডশেডিং। যার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে কৃষিজাত পণ্য সংরক্ষণে। এদিকে পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বলছে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় এবং চাহিদার তুলনায় কম পাওয়ায় রুটিন এর বাইরেও লোডশেডিং করতে বাধ্য হচ্ছে প্রতিষ্ঠান দু’টি। সাতক্ষীরা (ওজোপাডিকো) পিডিবিএর সহকারী প্রকৌশলী মতিউর রহমান জানান, সাতক্ষীরা শহরে পিডিবি এর ৪৯ হাজার বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছে। চাহিদা রয়েছে দৈনিক ১৮ থেকে ১৯ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে ১৩ থেকে ১৪ মেগাওয়াট। সুষ্ঠু বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার লক্ষে শহরকে ৭টি ফিডারে ভাগ করা হয়েছে। লোডশেডিংয়ের জন্য করা সময় সূচিতে প্রতি ফিডারে ২ ঘন্টা করে লোডশেডিং দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পিডিবি’র বিদ্যুৎ গ্রাহকরা জানান, ভোর,সকলা,দুপুর,সন্ধা ও রাতে সমান তালে বিদ্যুৎ লোডশেডিং থাকছে। কখনো কখনো দিনে ও রাতে মিলে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ বন্ধ থাকছে। এদিকে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার জিয়াউর রহমান জানান, জেলায় পল্লী বিদ্যুতের ৫ লাখ ৯৫ হাজার গ্রাহক রয়েছে। চাহিদা রয়েছে দৈনিক ১২২ মেগাওয়াট। জাতীয় গ্রীড থেকে প্রতিদিন ১৫ শতাংশ বিদ্যুৎ কম সরবরাহ করায় লোডশেডিং বৃদ্বি পেয়েছে। জাতীয় গ্রীড থেকে যখন যেমন বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে তার উপর ভিত্তি করে লোডশেডিং এর মাধ্যমে গ্রাহকের মাঝে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। সাতক্ষীরা আঞ্চলিক হ্যাচারি মালিক সমিতির সভাপতি ডাক্তার আবুল কালাম বাবলা এ প্রতিবেদককে বলেন, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন। দিনে ও রাতে ৭/৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় মিল-কলকারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে হিমায়িত চিংড়ি ও মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার ক্ষতি হচ্ছে। বিদ্যুৎ নির্ভর সাতক্ষীরার ১৫ থেকে ২০টি বাঁগদা হ্যাচারি, ৪৯টি মৎস্য হ্যাচারি, ৯৫টি মৎস্য নার্সারি ও ১৯টি মৎস্য প্রদর্শনী খামার রয়েছে। এছাড়া ফিস প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিগুলো বিদ্যুৎ নির্ভর। বিদ্যুৎ ও বরফ ছাড়া মাছ ও চিংড়ি হিমায়িতকরণ সম্ভব নয়। বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের শিকার হয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো অচল হয়ে পড়েছে। লোডশেডিংএর কবলে পড়ে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।