স্টার রিপোর্টার ঃ সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর গদাইপুর এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙেছে বৃষ্টি ও জোয়ারের প্রভাবে। এতে গদাইপুর গ্রামের একাংশ তলিয়েছে। গতকাল দেখা যায়, উপজেলা সদরের জেলেখালী-দয়ারঘাটের বেড়িবাঁধ, প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাহনিয়াসহ কয়েকটি স্থানে বাঁধের অবস্থা শোচনীয়। এর মধ্যে কয়েকটি এলাকায় বাঁধে ধস শুরু হয়েছে।টানা বৃষ্টি ও নদ-নদীতে অস্বাভাবিকভাবে জোয়ারের পানি বাড়ায় সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে খাজরা ইউনিয়নের গদাইপুর গ্রামের একাংশ তলিয়ে যায়। এ ছাড়া উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের কাঁকবাশিয়া এলাকায় পাউবোর বাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সরেজমিনে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আশাশুনি উপজেলা সদরের জেলেখালী-দয়ারঘাটের বেড়িবাঁধ, প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাহনিয়া, দরগাতলা আইট, সনাতনকাটি, চাকলা, খাজরা ইউনিয়নের গদাইপুর, শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালী, আনুলিয়া ইউনিয়নের কাঁকবাশিয়াসহ কয়েক জায়গায় বাঁধের অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যেকোনো সময় এসব জায়গার বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে গদাইপুর গ্রামের একাংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। গ্রামবাসীর স্বেচ্ছা শ্রমে সেই ভাঙ্গন কোন রকমে জোড়াতালি দিয়ে রক্ষা পায়।
গদাইপুর গ্রামের রমজান আলী বলেন, গদাইপুরের বাঁধটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা পাউবোর কর্মকর্তাদের বারবার তাগিদ দিলেও সংস্কারের উদ্যোগ না নেওয়ায় খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাঁধ ভেঙে যায়। ইতিমধ্যে গদাইপুরের শত শত বিঘার চিংড়িঘের তলিয়ে গেছে। ২০-২২টি বাড়ির আঙিনায় পানি থই থই করছে।
খাজরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিম বলেন, খোলপেটুয়া নদীর গদাইপুর এলাকায় ৫০ ফুট বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। তাঁরা স্থানীয়ভাবে স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ সংস্কার করে।
পাউবোর আশাশুনির খাজরা এলাকার উপসহকারী প্রকৌশলী মহিবুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গদাইপুর এলাকার বাঁধ হঠাৎ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে ছিল। তবে তাদের সহযোগীতায় সেই বাঁধ সংস্কাার করা হয়েছে।
আনুলিয়া ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও কাঁকবাশিয়া গ্রামের বাসিন্দা এ টি এম আখতারুল ইসলাম বলেন, তাঁদের এলাকার দুই জায়গায় পাউবোর বেড়িবাঁধের প্রায় ৫৫০ মিটার জায়গা খুব নাজুক অবস্থায় আছে। সামনের পূর্ণিমার জোয়ারে এই বাঁধ টিকবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। তিনি বলেন, বাঁধটি দ্রুত সংস্কার না করলে যেকোনো সময় কাঁকবাশিয়া, চেউটিয়া, কাপসন্ডা, বিছট, নয়াখালি ও আনুলিয়া গ্রাম প্লাবিত হতে পারে।
পাউবো-২ সাতক্ষীরার উপসহকারী প্রকৌশলী আলাউদ্দিন কবির বলেন, গত শুক্রবার থেকে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। কাঁকবাশিয়া এলাকার মামুনের বাড়ির সামনে ২৩০ মিটার ও কাঁকবাশিয়ার বউদির খেয়াঘাটের উত্তর পাশে ২৪০ মিটার বাঁধে হঠাৎ ধস শুরু হয়। বাঁধটি দ্রুত মেরামত করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, রোববার থেকে এখনো টানা বৃষ্টি হচ্ছে। সেই সাথে নিন্মচাপের কারণে নদীতে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। দুপুরের জোয়ারে হঠাৎ করেই আবদুল মান্নান মাস্টারের ঘের সংলগ্ন এলাকায় ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে ৩০০ বিঘা জমির ঘের তলিয়ে গেছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, ভাঙন কবলিত বাঁধ মেরামতের জন্য তড়িৎ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।