আনিসুর রহমান :
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস/যশ এর প্রভাবে সৃষ্ট অতি জোয়ারের চাপে উপকুলবর্তী ৪টি ইউনিয়ন প্লাবিত, ৫টি ইউনিয়ন আংশিক প্লাবিত। পানিবন্দী প্রায় ৬০ হাজার মানুষ, তলিয়ে গেছে হাজার হাজার বিঘা চিংড়ি ঘের ও ঘরবাড়ি। উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী ও কৈখালী ইউনিয়ন সম্পুর্নভাবে প্লাবিত হয়েছে। আটুলিয়া, কাশিমাড়ী, নুরনগর, রমজাননগর ও মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন আংশিক প্লাবিত হয়েছে। শ্যামনগর উপজেলার প্রায় ৭০টি গ্রামে জোয়ারের নদীর পানি প্রবেশ করেছে।
পাশর্^বর্তী খোলপেটুয়া, কপোতাক্ষ, কালিন্দি, চুনকুড়িসহ অপরাপর নদীতে জোয়ারের ৪/৫ ফুট পানি বৃদ্ধির ফলে ২৬ মে (বুধবার) দুপুর ১২ টার দিক উপকূলীয় রক্ষা বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। শুরুতে বাঁধের উপর মাটি দিয়ে পানির প্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টা করলেও জোয়ারের তীব্রতার কারনে অল্প সমেয়র মধ্যে স্থানীয়রা ‘আশা’ ছেড়ে দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুড়তে থাকে। গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, ৩নং ক্লোজারের বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে এবং জেলেখালী, গাগড়ামারী, নাপিতখালী ও নেবুবুনিয়া এলাকার পাউবো’র বেড়িবাঁধ উপচে জোয়ারের পানি ঢুকে একে একে তার ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের সবগুলো প্লাবিত করেছে। তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার রাত কিংবা বুধবার সকালে কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে না উঠলেও পানিতে গোটা এলাকা প্লাবিত হওয়ার পর মানুষ সাইক্লোন শেল্টার গুলোতে পৌঁছাতে শুরু করেছে। একইভাবে পদ্মপুকুরের পাতাখালী এলাকার প্রায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ উপচে ১৫ টি গ্রাম ও কয়েকশ; চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে। মুন্সিগঞ্জের ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মোড়ল জানান, ইয়াসের প্রভাবে ফেনীতে তার ইউনিয়নের বাসিন্দা হাদিউজ্জামান নামীয় এক জেলের মৃত্যু হয়েছে। সিংহড়তলী এলাকার বাঁধ ছাপিয়ে পাশের চুনকুড়ি নদীর পানি সিংহড়তলী, হরিনগর, কচুখালসিহ অন্তত চারটি গ্রাম তলিয়ে গেছে বলে জানায় স্থানীরা। মানুষ শুরুতে বাঁধ এর উপর মাটি ফেলে পানি আটকানোর চেষ্টা করলেও প্রবল জোয়ারের তোড়ে সে চেষ্টা ব্যর্থ হলে তারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে যাচ্ছে। বুড়িগোয়ালীনি ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডল জানান, দুর্গাবটি ও দাতিনাখালীসহ পাশর্^বর্তী এলাকার বাঁধ ছাপিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের সাতটি গ্রামকে প্লাবিত করেছে। মহসিন হুলোর মোড়ে ১০ হাজার লোকের একমাত্র সুপেয় নিরাপদ পানির দীঘিটি হুমকির মুখে। তার এলাকার কাঁচা ঘরবাড়ি ও রাস্তাসহ কয়েকশ’ চিংড়ি ঘের দুপুরের অগেই জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। রমজাননগরের কালিঞ্চী ও শেখবাড়ী সংলগ্ন উপকুল রক্ষা বাঁধের উপর দিয়ে পানি এসে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে সাতটি গ্রামকে প্লাবিত করেছে বলে জানা যায়। কৈখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম জানান, বেলা একটার ভাটা শুরু হওয়ার আগেই জোয়ারের তোড়ে তার ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামে প্লাবিত হয়েছে। তিনটি অংশের বাঁধ ভাঙলেও আরও অন্তত চল্লিশটিরও বেশী জায়গার বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে নদীর পানি ঢুকে বসতঘর ও মিষ্টি পানির পুকুরগুলো ভাসিয়ে দেয়ায় সমগ্র এলাকায় বিপর্যয়ের সম্ভনা তৈরী হয়েছে।
নুরুনন্নবী, জাহিদুল ইসলাম ও মোর্ত্তজা কামাল সহ স্থানীয়রা জানান দিনের জোয়ারে এই ক্ষতি হয়েছে, রাতের জোয়ারে কি হবে আল্লাহ পাকই জানেন। নদীতে ভাটা শুরু হলেও পানি কমছে না। ফলে রাতের জোয়ারে ইতিমধ্যে প্লাবিত অংশসমুহ আরও পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার শংকায় পড়েছে তারা। ইতিমধ্যে পাঁচ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ও অন্তত বিশ হাজার ছোট বড় চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষতিসাধিত হয়েছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দাবি করেছেন
কাশিমাড়ীর চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ এবং আটুলিয়ার চেয়ারম্যান আবু সালেহ বাবু জানিয়েছেন দুপুরের কিছু আগে বেড়িবাঁধ উপচে তাদের ইউনিয়নের অন্তত পাঁচটি গ্রামে পানি ঢুকেছে। স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে নিচুঁ অংশের এসব বাঁধের উপর মাটি দিয়ে পানির প্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টা করছে বলেও তারা জানান।
উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানাযায়, ইয়াস প্রভাবের কারণে চিড়া, চিনি, বিস্কুট, শিশু খাদ্য ও গো খাদ্য বিতরন অব্যহত রয়েছে। শ্যামনগরের অধিকাংশ এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
সাতক্ষীরা ৪ আসনের এমপি এস এম জগলুল হায়দার, শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলন, ইউএনও আ ন ম আবুজর গিফারী, উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মোঃ শহিদুল্লাহ, শ্যামনগর থানা অফিসার ইনচার্জ আলহাজ্জ্ব নাজমুল হুদা ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহিনুল ইসলাম ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর প্রভাবে সৃষ্ট অতি জোয়ারের চাপে উপকুলবর্তী গাবুরা,পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন সহ কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ায় ৬০ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। খাবার পানির সংকটে পড়েছে তারা। শ্যামনগর উপজেলার ক্ষতির পরিমান নিরুপন করা সম্ভব হয়নি বলে উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছেন।