আবু সাইদ,সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে কপোতাক্ষ নদ খনন প্রকল্পে ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়ায় জমির বেশির ভাগ মালিকেরা তাঁদের জমি দখলে নিয়েছে। এতে ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের ৮শ কোটি টাকার অতি জনগুরুত্বপূর্ন কপোতাক্ষ নদ খনন প্রকল্প। পাখিমারা বিলের জোয়ারাধার (টিআরএম) দেড় বছর ধরে বন্ধ আছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর পেরিয়ে গেলেও পাখিমারা বিলের জমির মালিকেরা ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে পাখিমারা বিলের কৃষকদের ১৫৫৬.৬২ একর জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ দুই বছরের জন্য ১৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও অদ্যবধি কোনও কৃষক তা পাননি। ফলে টিআরএম ভুক্ত বিলের জমি মালিকরা তাদের জমি নিজেদের দখলে নিয়ে সেখানে এখন মাছ ও ধান চাষ করছে। কপোতাক্ষ নদ খনন প্রকল্পের ৫৩১ কোটি ৭ লাখ টাকার কাজ চলছে ধীরগতিতে। ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়ায় জমির বেশির ভাগ মালিকেরা তাঁদের জমি দখলে নিয়ে চাষাবাদ ও মাছ চাষ শুরুকরায় প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।তালার জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের দুই বছর অতিবাহিত হলেও টিআরএম বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি নেই। ২০২০ সালে জলোচ্ছ্বাস ও উচ্চ জোয়ারের চাপে পাখিমারা বিলের গ্রাম রক্ষা (পেরিফেরিয়াল) বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রকল্পের স্বার্থে গ্রাম রক্ষা বাঁধ সংস্কার করার জন্য ২০২১ সালের মার্চ মাসে টিআরএম বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু ক্ষতিপূরণের টাকা না পেয়ে জমির মালিকেরা গ্রাম রক্ষা বাঁধ মেরামত করতে দেননি। ফলে আর চালু করা যায়নি টিআরএম। বালিয়া গ্রামের কৃষক আবদুল আলিম মোড়ল ও ফিরোজ সানা জানান, টিআরএম এলাকায় তাঁদের আট বিঘা করে জমি আছে। ২০১১ ও ২০১২ সালের ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছিলেন। ২০১৩ সাল থেকে তাঁরা ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা পাচ্ছেন না। একই সঙ্গে ওই বিলে জমি থাকা প্রায় দুই হাজার কৃষক ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছেন না।পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প (প্রথম পর্যায়)’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ২৬১ কোটি ৫৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকার প্রকল্পটি ২০১১ সালের জুলাই মাসে শুরুহয়ে ২০১৭ সালের জুন মাসে শেষ হয়। ওই প্রকল্পের মধ্যে ৯০ কিলোমিটার নদী খনন ও তালা উপজেলার জালালপুর ,খেসরা ও মাগুরা ইউনিয়নে অবস্থিত পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন করা হয়। পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন হওয়ায় কপোতাক্ষ নদের অববাহিকা জলাবদ্ধতা মুক্ত হয়ে ১৫ লাখ মানুষ উপকৃত হন। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের অগ্রগতি অব্যাহত রাখার স্বার্থে ২০২০ সালের আগস্ট মাসে ৫৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত৪ বছর মেয়াদি দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। গৌতমকাটি গ্রামের মোস্তাক হোসেন ও সবেদ আলী জানান, পাখিমারা বিলে প্রথম পর্যায় প্রকল্পে টিআরএম বাস্তবায়নের ফলে কপোতাক্ষ অববাহিকার কয়েক লাখ মানুষ উপকৃত হয়েছিলেন। দ্বিতীয় পর্যায় ইতিমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্তটিআরএমের জন্য ব্যবহৃত জমির ক্ষতিপূরণ পাননি তাঁরা। তালা উপজেলা পানি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর জিল্লুর রহমান বলেন, কপোতাক্ষ খননের প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পের ২০১১ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্তটিআরএম এলাকায় জমি থাকা কৃষকদের দুই বছরের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। এরপর থেকে আর ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি কৃষকেরা। দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পের ১ হাজার ৫৫৬ একর জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ বছরে ১৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও কৃষকরা এখনো তা পাননি। ফলে জমির মালিক কৃষকেরা আর্থিক সংকটে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে অনেকেই দখল নিয়ে চাষাবাদ ও মাছ চাষ শুরুকরেছেন। ফলে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডেও নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে নদী খনন সাতক্ষীরা অংশে প্রায় ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। টিআরএম এলাকার জমি থাকা কৃষকদের ক্ষতিপূরণের টাকা পর্যায়ক্রমে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের দুই বছর অতিবাহিত হলেও কৃষকেরা ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়ায় কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না।
পূর্ববর্তী পোস্ট