ডেস্ক রিপোর্ট ঃ
সাশ্রয়ী মূল্যে পাঁচ কেজি চাল পেতে প্রখর রোদে লাইনে দাঁড়ান মনোয়ারা বেগম। প্রায় তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর ওএমএসের ট্রাকের কাছে পৌঁছাতে পারেন তিনি। কিন্তু লাইনের বাইরেও চাল বিক্রি করতে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মনোয়ারা। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে
সাশ্রয়ী মূল্যে পাঁচ কেজি চাল পেতে প্রখর রোদে লাইনে দাঁড়ান মনোয়ারা বেগম। প্রায় তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর ওএমএসের ট্রাকের কাছে পৌঁছাতে পারেন তিনি। কিন্তু লাইনের বাইরেও চাল বিক্রি করতে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মনোয়ারা। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জাহিদুল করিম
ঢাকার বাজারে এখন মোটা চালের (স্বর্ণা) কেজি ৫৫ টাকায় উঠেছে, যা এক মাস আগের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। বাজারে নজর রাখা ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাম্প্রতিক কালে এই দর সর্বোচ্চ।
চালের মূল্যবৃদ্ধির হিসাবটি সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি)। বাজার ঘুরেও দেখা গেছে একই চিত্র। শুধু মোটা চাল নয়, টিসিবি বলছে, সরু ও মাঝারি চালের দামও বেড়েছে। তবে বাড়ার হার মোটা চালের চেয়ে কম—৪ থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ।
টিসিবির গতকাল সোমবারের হিসাবে, বাজারে এখন এক কেজি সরু চাল কেনা যাচ্ছে ৬৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। মাঝারি চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে। আর মোটা চাল সর্বনিম্ন ৫৫, সর্বোচ্চ ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চালের বিকল্প খাদ্য আটার (খোলা) দামও এক মাসে বেড়েছে ২০ শতাংশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান নিজের একটি গবেষণার বরাত দিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেলে মানুষ ব্যয় সাশ্রয়ের অংশ হিসেবে মাঝারি চাল থেকে সরে মোটা চাল কেনা শুরু করে। এবার মোটা চালের দাম বেশি বাড়ার ক্ষেত্রে একটি কারণ হতে পারে, মানুষ মোটা চাল কেনা বাড়িয়েছে। এতে মোটা চালের বাজারে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে।চালের দামের সেই সময়
চাল দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য। চালের দাম বাড়লে তা মূল্যস্ফীতির ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। এ কারণে এই পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা দেখা যায়। এমনকি রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ইশতেহারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়।
দেখে নেওয়া যাক সাম্প্রতিক কালে বাজারে চালের দাম কেমন ছিল। ঢাকার বাজারে চালসহ নিত্যপণ্যের দামের হিসাব রাখে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। তাদের হিসাবে ২০০৯ সালে ঢাকায় মোটা চালের গড় দাম ছিল প্রতি কেজি ২৩ টাকার কিছু বেশি। সরু চাল বিক্রি হতো সর্বোচ্চ ৪০ টাকা কেজি দরে।
টিসিবির হিসাবে, ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি ঢাকার বাজারে মোটা চালের দাম ছিল ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা, যা পাঁচ বছর পরে (২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি) ৩৮ থেকে ৪২ টাকায় দাঁড়ায়।
বহু পরিবার আছে, যাদের বাজার ব্যয়ের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ যায় চালের পেছনে। মানুষের অবস্থা যে খারাপ, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
গোলাম রহমান, সভাপতি, ক্যাব
অবশ্য মাঝে ২০১৭ সালের শেষ দিকে চালের দাম ব্যাপক বেড়ে গিয়েছিল। মোটা চালের কেজি উঠেছিল ৫০ টাকায়। এর কারণ ছিল হাওরে আগাম পানি চলে আসা ও অতিবৃষ্টির কারণে ফসলহানি। এরপর আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়। এতে দাম কমতে শুরু করে।
২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় চালের কেজি ৩০ টাকায় নামে। এরপর যে বাড়ার প্রবণতা শুরু হয়, তা আর কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে তা তেমন একটা কাজে লাগেনি। দাম বাড়তে বাড়তে বর্তমান পর্যায়ে এসেছে।
এখনকার দর
ঢাকার মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের আড়তে গতকাল মোটা চাল (গুটি-স্বর্ণা) বিক্রি হয় ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে। আড়তদারেরা জানিয়েছেন, এই দর এক মাস আগে ৪২ টাকার আশপাশে ছিল। পাইকারিভাবে বিআর-২৮ ও সমজাতীয় মাঝারি চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা কেজি দরে। সরু চালের মধ্যে জনপ্রিয় মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৭ থেকে ৭০ টাকা দরে। আর নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৪ টাকা দরে।
কৃষি মার্কেটের বরিশাল রাইস এজেন্সির ব্যবস্থাপক মহিউদ্দিন রাজা প্রথম আলোকে বলেন, মিলমালিকেরা ধানের দাম বেড়ে যাওয়াকে চালের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। আর ট্রাকভাড়া বৃদ্ধিও একটি কারণ।
এদিকে কুষ্টিয়া ও নওগাঁয় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে।
রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজারে মোটা চাল (গুটি ও স্বর্ণা) প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায়। এখন মাঝারি বিআর-২৮ চালের কেজি ৬০ থেকে ৬২ টাকা। সরু মিনিকেট চালের কেজি ৭০ থেকে ৭২ টাকা এবং নাজিরশাইল ৮৪ থেকে ৮৬ টাকা দরে বিক্রি করেন বিক্রেতারা।
মহাখালী বাজারের চাল বিক্রেতা ফিরোজ আলম বলেন, ‘দাম বেশি বলে কেউ কেউ দর-কষাকষি করে ফিরেও যাচ্ছেন। আজ (সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত) মাত্র ২২ কেজি চাল বিক্রি হয়েছে।’এফ হোসেন / সাতক্ষীরা ট্রিবিউন