গাজী জাহিদুর রহমান,তালা (সাতক্ষীরা) সংবাদদাতা
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কয়েক হাজার মানুষ নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার ও স্বাস্থ্য-সঙ্কটে ভুগছেন। নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের অভাবে তারা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। দুঃসহ জীবন কাটাচ্ছেন অসহায় পরিবারগুলো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার খলিষখালী ইউনিয়নের ৩২ গ্রামের ৬২০০ পরিবার, জালালপুরের ১৩ গ্রামের পাঁচ হাজার ৪০০ পরিবার ও নগরঘাটা ইউনিয়নের ২১ গ্রামের চার হাজার ২০০ পরিবার মিলে তিন ইউনিয়নের ৬৬ গ্রামের ১৫ হাজার ৮০০ পরিবার এখনো নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার ও স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত। অনেকেই পুষ্টি-হীনতার পাশাপাশি ডায়রিয়া, আমাশয়, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, চুলকানি, পাঁচড়া, উচ্চ রক্তচাপ, হাপানীসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ সমস্যা সমাধানে এলাকাবাসীকে সচেতন করার জন্য সরকারের পাশাপাশি কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা উত্তরণ।
তালা উপজেলার জালালপুর, খলিষখালী ও নগরঘাটা ইউনিয়নের বেশির ভাগ মানুষ অগভীর নলকূপের পানি ব্যবহার করেন। নলকূপগুলোর বেশির ভাগই আর্সেনিক ও আয়রনযুক্ত। এই তিন ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ ব্যবহার করছেন আর্সেনিক ও আয়রনযুক্ত পানি। গ্রামের বেশির ভাগ নলকূপের গোড়া এখনো পাকা নয়। এসব গ্রামের বেশির ভাগ পরিবার স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার ব্যবহার করেন না। একটি শৌচাগার তিন-চারটি পরিবার ব্যবহার করে থাকে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে এখনো অনেকেই সচেতন নন।
উত্তরণের ওয়াই ওয়াশ (নিউ এরিয়া ওয়াশ এসডিজি ওয়াই এসপি বাংলাদেশ) প্রকল্পের সমন্বয়কারী হাসিনা পারভীন জানান, তালা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কয়েক হাজার মানুষ নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার ও স্বাস্থ্য সঙ্কটে ভুগছেন। এ জন্য তারা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ জন্য এলাকাবাসীকে সচেতন করার জন্য সরকারের পাশাপাশি ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে কাজ করছে উত্তরণ।
নগরঘাটার পালপাড়া এলাকার তানজিলা বেগম, পারুল বিবি, ছায়রা খাতুন, ভৈরবনগরের অরুণা ম-ল, শিউলি মুন্ডা, খলিষখালীর বয়ারডাঙ্গা গ্রামের তাসলিমা বেগম, ফাহিমা বেগম, বাগডাঙ্গা গ্রামের ময়না গোলদার,অসীমা ম-ল, স্বপন ম-ল, জালালপুরের কানাইদিয়া গ্রামের শ্যামল অধিকারী, জবেদা বেগম, অর্চনা দেবনাথ, আটুলিয়ার আয়শা বেগমসহ অনেকেই জানান, তাদের এলাকায় বৃষ্টির সময় ৫-৬ মাস জলাবদ্ধতা থাকে এবং লবণাক্ততার কারণে খাবার পানির কোনও ব্যবস্থা নেই। প্রায় ২-৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এক কলস খাবার পানি আনতে হয়। আবার এক ড্রাম পানি ২৫ থেকে ৩০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। বর্ষা মৌসুমে ভিটে-বাড়িতে পানি জমে থাকায় শৌচাগার ব্যবহারের মতো অবস্থা থাকে না। আর লবণাক্ত পানি ব্যবহারের ফলে উচ্চ রক্তচাপ, চুলকানি, পাঁচড়া, পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন এসব এলাকার মানুষ। এ ছাড়া আর্সেনিকের কারণে এলাকায় অনেকের মৃত্যুও হয়েছে।
এ ব্যাপারে জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু জানান, এলাকায় খাবার পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের অভাবের পাশাপাশি আর্সেনিকের সমস্যা প্রকট। ভয়াবহ আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে অত্র এলাকার কৃষ্ণকাটী গ্রামের একই পরিবারের চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, এ সমস্যা সমাধানে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম আরও জোরদার করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
তালা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মফিজুর রহমান জানান, উপজেলার কয়েকটি এলাকায় লেয়ার না পাওয়ায় ডিপ-টিউবওয়েল বসানো সম্ভব হয়ে উঠছে না। বিশেষ করে জালালপুর ও খলিষখালী ইউনিয়নে এ সমস্যা বেশি প্রকট। কিন্তু ২০০ ফুটের বেশি গভীরে কিছু টিউবওয়েল বসলেও তাতে প্রায় ৯৫ ভাগ আর্সেনিক ও আয়রনের সমস্যা থেকে যাচ্ছে। তবে নগরঘাটা এলাকার অবস্থা অপেক্ষাকৃত ভালো। নিরাপদ পানি ও শৌচাগারের ব্যবস্থা আগের চেয়ে বেশ উন্নত হয়েছে বলে জানান তিনি।