মোমিনুর রহমান, দেবহাটা: দেবহাটার কুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঈদ উপহারের টাকা বিতরণের নামে বে-আইনীভাবে নিজেদের সম্ভাব্য প্রতিক সম্বলিত মানি টোকেন দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা এবং সুবিধা ভোগীর তালিকা প্রণয়নে স্বজনপ্রীতি ও দলীয় করণের অভিযোগ উঠেছে দায়িত্বরত প্যানেল চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আসাদুল ইসলাম সহ দুজন ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত অপর দুই ইউপি সদস্যরা হলেন কুলিয়ার ৯নং ওয়ার্ডের পুরুষ ইউপি সদস্য বিকাশ সরকার ও একই ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্যা শ্যামলী রানী।
রবিবার প্রধানমন্ত্রীর প্রদেয় ঈদ উপহারের টাকা বিতরণের আগে প্যানেল চেয়ারম্যান আসাদুল ইসলাম ও অভিযুক্ত অপর দুই ইউপি সদস্য বিকাশ সরকার এবং শ্যামলী রানী সুবিধাভোগীদের কাছে নিজেদের সম্ভাব্য প্রতিক আনারস, সিলিং ফ্যান ও মাইকের চিহ্ন সম্বলিত মানি টোকেন সরবরাহ করেন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
এছাড়া ওই ঈদ উপহারের টাকা দেয়ার জন্য নয়টি ওয়ার্ড ভিত্তিক যে তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে, তাতেও বাছাইকৃত নিজেদের সমর্থকদের অগ্রাধিকার দেয়ায় স্বজনপ্রীতি ও দলীয় করণের অভিযোগ করেছেন তালিকায় স্থান না পাওয়া সুবিধা বঞ্চিত একাধিক অসহায় পরিবার।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দেয়া টাকা বিতরণে সরকার দলীয় প্রতিক নৌকা নয়, বরং আনারস সহ অন্যান্য প্রতিকের নির্বাচনী প্রচারনা চলছে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে রবিবার সরেজমিনে ঘটনার সত্যতা পান গণমাধ্যামকর্মীরা। এসময় অভিযুক্ত ইউপি সদস্য বিকাশ সরকারকে দেখা যায় চেয়ারম্যানসহ তাদের দুই ইউপি সদস্যের আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রতিক সম্বলিত মানি টোকেন সুবিধাভোগীদের মধ্যে বিতরণ করতে। বিষয়টি কুলিয়া ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান আসাদুল ইসলামকে জানালে তিনি বলেন, আমি সুবিধা ভোগীদের টাকা তুলতে ব্যাংকে এসেছি। আমাদের প্রতিকসহ ওই টোকেন গুলো বিকাশ মেম্বর ছাঁপিয়ে সুবিধা ভোগীদের মাঝে বিতরণ করছেন। এতে আমার কোনো দোষ নেই। তবে তার অগোচরে একজন ইউপি সদস্য কিভাবে প্যানেল চেয়ারম্যানসহ নিজেদের আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রতিক নির্ধারণ এবং টোকেন আকারে ছাপিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের সাথে বিতরণ করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তেমন কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
অন্যদিকে কুলিয়া ইউনিয়নের নুনেখোলা গ্রামের পঙ্গু আওয়ামী লীগ কর্মী আশরাফুল ইসলাম, লাবণ্যবতী খালপাড়ের বাসিন্দা বৃদ্ধ মাহবুবুর রহমান গাজীসহ সুবিধা বঞ্চিত বহু অসহায় পরিবার জানান, প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার বিতরণে আমাদের ইউনিয়নে জনপ্রতিনিধিরা দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতি করেছেন। আমরা পঙ্গু ও অসহায় হওয়া স্বত্ত্বেও, সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুল হকের সমর্থক হওয়ায় আমরা প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান জনপ্রতিনিধিরা তাদের সমর্থকদের অগ্রাধিককার এবং আমাদের বঞ্চিত করে অবিচার করেছেন। তবে ভুক্তভোগীদের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্যানেল চেয়ারম্যান আসাদুল ইসলাম।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার বিতরনে নির্বাচনী প্রচারণা, তালিকা প্রণয়নে দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পেয়ে বেলা ১২টার দিকে কুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমা আক্তার ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মুজিবর রহমানসহ উপজেলা প্রশাসনের অফিসাররা। এসময় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া টাকা বিতরণের মানি টোকেনে নির্বাচণী প্রতিক সম্বলিত প্রচারণা চালানোর সত্যতা পেয়ে জড়িত প্যানেল চেয়ারম্যান আসাদুল ইসলাম এবং দুই ইউপি সদস্য বিকাশ সরকার ও শ্যামলী রানীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট ট্যাগ অফিসারকে লিখিত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন ইউএনও তাছলিমা আক্তার।
ইউএনও বলেন, অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় কুলিয়ার নয় নম্বর ওয়ার্ডে টাকা বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত এবং ট্যাগ অফিসারকে লিখিত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে পুনরায় তালিকা প্রণয়ন করে ওই ওয়ার্ডে টাকা বিতরণ করা হবে বলেও জানান ইউএনও।