মসিউর রহমান ফিরোজ সাতক্ষীরা জেলা সংবাদদাতা:-
আতœত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া মায়ের ভাষাতেই বাঙালির আবেগ যেন পূর্ণতা পায়। কারন মায়ের ভাষাই মিষ্টি বেশী। রক্তকমলে গাঁথা বর্ণমালার মালা, শিল্পীর আল্পনায় আঁকা রাজপথ আর প্রভাতফেরির গানে মুখরিত করে পালিত হয়েছে একুশের প্রথম প্রহর। মহান ভাষা আন্দোলনে যে রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়েছিলো, সেই রাজপথে বর্ণমালার আল্পনায় ছড়িয়েছে-একুশ মানে মাথা নত না করার অবিনাশী চেতনা।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রæয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের উপর গুলি চালায় পুলিশ। এতে শহীদ হন সালাম,রফিক,জব্বার,বরকত,শফিউরসহ নাম না জানা আরো অনেকে। পাকিস্তান শাসনামল থেকেই দিনটিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে আসছে বাঙালিরা। ভাষার দাবিতে বিশ্বের প্রথম জাতি হিসাবে বাঙালীরা তাদের মায়ের ভাষা রক্ষা করতে জীবন দেওয়ায় ২১শে ফেব্রæয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো।
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর একটি সভায় ১৮৮টি রাষ্ট্রের সম্মতিতে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। ২০০০ সাল থেকে সারা বিশ্বে দিবসটিকে যথাযথ মর্যাদায় পালন করছে বিভিন্ন ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী। সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একুশে’র প্রথম প্রহরে শ্রদ্ধা নিবেদনে’র মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে বাঙালি’র আত্মত্যাগে’র অহংকারে অমর একুশে শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
সাতক্ষীরার সর্বত্র মহান একুশের চেতনাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে রাজপথ থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত বর্ণে বর্ণে শোভা পায় বর্ণমালার বর্ণিল সাজ। একুশ আমার অহংকার, একুশ আমার গর্ব,একুশের চেতনা, হারিয়ে যেতে দেব না। সালাম, রফিক, জব্বার ভাই, আমরা তোমাদের ভুলি নাই। ¯েøাগানে ¯েøাগানে মুখরিত সাতক্ষীরার শহীদ মিনার চত্ত¡র। মনের সবটুকু আবেগ উজাড় করে দিয়ে বিন¤্র শ্রদ্ধায় ভাষা শহীদদের স্মরণ করেছে সাতক্ষীরার সর্বস্তরের মানুষ।
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর এক ঘোষণায় ২১ শে ফেব্রæয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়। অমর একুশের অবিনাশী চেতনা-ই আমাদের যুগিয়েছে স্বাধিকার, মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অফুরন্ত প্রেরণা ও অসীম সাহস। ফেব্রæয়ারির রক্তঝরা রাজপথ বেয়েই অর্জিত হয় মাতৃভাষা বাংলার স্বীকৃতি এবং এরই ধারাবাহিকতায় আসে বাঙালির চিরকাঙ্খিত স্বাধীনতা, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
শ্রদ্ধার ফুলে ভরে গেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহীদ মিনারের বেদি। মহান ভাষা শহীদদের স্মরণে আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠানমালা। ২০ ফেব্রæয়ারি বিকালে শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্ত¡রে বেদনার সুর-ছন্দময় আবৃত্তির আবেশে শিল্পীরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন মহান ভাষা সৈনিকদের।
দুর্নীতি, মাদক, অন্যায়-অপশক্তির বিরুদ্ধে জেগে ওঠার আহŸান জানান বক্তারা। একুশের চেতনাকে সমুন্নত রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালনের মধ্য দিয়ে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সুখি-সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ার দৃপ্ত প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বক্তারা। স্বাধীনতা বিরোধী ও অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহŸান জানান তারা।
প্রাণের মাতৃভাষা ‘বাংলা’কে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিয়ে প্রমিত উচ্চারণ ও বানানরীতি অনুসরণ করার আহŸান ছিলো সবার কণ্ঠে। নৈরাজ্য-নাশকতার বিরুদ্ধে মুক্তিকামী মানুষ আবদ্ধ হন ঐক্যের বন্ধনে। সন্ত্রাস-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ¯েøাগান, জেগে ওঠার আহŸান আর বদলে যাওয়ার জয়গানে মুখরিত হয়ে ওঠে শহীদ মিনার চত্ত¡র।
রাত ১২টা ১ মিনিটে নীরবতা ভেঙে সবাই এক সুরে গাইলেন সেই চিরচেনা অবিনাশী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি। ছেলে হারা শত মায়ের অশ্রæ গড়া এ ফেব্রæয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি। শোকাবহ পরিবেশে সুরের মূর্ছনা থামতেই শহীদ মিনার বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে একুশের প্রথম প্রহর উদযাপন করা হয়।
একুশের প্রথম প্রহরে মনের সবটুকু আবেগ উজাড় করে দিয়ে বিন¤্র শ্রদ্ধায় ভাষা শহীদদের স্মরণ করে শহীদ মিনারের বেদিতে, সাতক্ষীরা ০২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি , ০১ আসনের সংসদ সদস্য এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামালসহ প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তাগণ, পুলিশ সুপার মো: মোস্তাফিজুর রহমানসহ পদস্থ কর্মকর্তাগণ, জেলা আওয়ামীলীগ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা পরিষদ, সাতক্ষীরা পৌরসভা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব, দৈনিক ভোরের কাগজ, দৈনিক বাংলাদেশ পোষ্ট, দৈনিক ঢাকা প্রতিদিন,দৈনিক প্রথম আলো,দৈনিক সমকাল, সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসসহ দুশতাধিক সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গসংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ।
এছাড়াও জেলা বিএনপি, জেলা জাতীয় পার্টি, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টি, জেলা জাসদ, জেলা বাসদ ও সরকারি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিনম্র শ্রদ্ধায় ভাষা শহীদদের স্মরণ করে শহীদ মিনারের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন।