ফিরোজ হোসেন, সাতক্ষীরা ঃ সাতক্ষীরার আনোয়ার হোসেনকে দেশের প্রথম ভাষা শহীদ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে মানববন্ধন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছে। রোববার সকালে আশাশুনি-সাতক্ষীরা সড়কের বুধহাটা বাজারে এ মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করা হয়।
শহীদ ভাষা সৈনিক আনোয়ার হোসেন স্মৃতি সংরক্ষন কমিটির আয়োজনে মানববন্ধন কর্মসুচি চলাকালে বক্তব্য দেন ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সাতক্ষীরা জেলা শাখার আহবায়ক অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যাণার্জি, সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ, শহীদ ভাষা সৈনিক আনোয়ার হোসেন স্মৃতি সংরক্ষন কমিটির সভাপতি সাংবাদিক সচ্চীদানন্দ দে সদয়, সাধারণ সম্পাদক কেএম হাসান,শহীদ আনোয়ার হোসেনের খালাত ভাই আছিরউদ্দিন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, পৈতৃক ভিটা আশাশুনির শোভনালী গ্রামে হলেও শহীদ ভাষা সৈনিক আনোয়ার হোসেন সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা গ্রামের তার নানার বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করেন। মেধাবী আনোয়ার হোসেন বুধহাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। পরে বুধহাটা বিবিএম কলেজিয়েট বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার একপর্যায়ে তিনি খুলনা জেলা স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৪৬ সালে এসএসসি পাস করেন। তিনি খুলনার বিএল কলেজে পড়াশুনাকালীন ভাষা আন্দোলনে যোগ দেন। তরুণ আনোয়ার হোসেন আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ খুলনার তৎকালিন গান্ধী পার্কে(বর্তমানে হাদিস পার্ক) ভাষা আন্দোলনের পক্ষে ইস্তেহার পাঠ করার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কয়েকদিন পর তিনি মুক্তি পান। পরে ভাষা আন্দোলনের মিছিল থেকে ১৯৪৯ সালে পুলিশ তাকে আবারও গ্রেপ্তার করে প্রথমে খুলনা কোতয়ালী থানায় রাখে ও পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজশাহী কারাগারে। কারাগারে থেকেও পাকিস্তান সরকারের নির্যাতন ও নিপীড়ণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রাখেন তিনি।একপর্যায়ে ১৯৫০ সালে ২৪ এপ্রিল রাজশাহী জেলে খাপড়া ওয়ার্ডে গুলি চালানো হয়। তাতে সাতজন কারাবন্দি নিহত হন। নিহতরা হলেন, বিজন সেন, দিলওয়ার হোসেন, হানিফ শেখ, কম্পরাম সিংহ, সুখেন্দু ভট্টাচার্য, সুধীন ধর ও আনোয়ার হোসেন । তার মধ্যে রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবিতে একমাত্র ছাত্র নেতা আনোয়ার হোসেন মারা যান। বর্তমানে তার পরিবারের কেউ বেঁচে নেই। মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলনে ভাষা সৈনিক আনোয়ার হোসেন দেশের প্রথম শহীদ। অথচ ৭২ বছর পরেও রাষ্ট্রীয়ভাবে তার কোন স্বীকৃতি নেই। তার স্মৃতি রক্ষায় গঠণ করা হয়েছে আনোয়ার হোসেন স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি।
মানববন্ধনে দাবি জানানো হয়, শহীদ আনোয়ার হোসেনের স্মৃতি রক্ষায় তাকে দেশের প্রথম ভাষা সৈনিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে। আশাশুনি সরকারি কলেজকে শহীদ ভাষা সৈনিক আনোয়ার হোসেনের নামে নামকরণ করতে হবে। এছাড়া সাতক্ষীরা,আশাশুনি,বুধহাটাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তার স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা,সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়ক তার নামে নামকরণ করা ও তার নামে সরকারিভাবে ট্রাস্ট গঠন করার দাবিও জানানো হয় মানববন্ধনে।
মানববন্ধন শেষে আশাশুনি উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা ইয়ানুর রহমানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়।