সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ঃ
সাতক্ষীরার দেবহাটার নাংলায় সরকারি কাজে বাধা, আসামী ছাড়িয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের দায়ের করা মামলায় স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সাতক্ষীরা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা গত রবিবার উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের নাংলা গ্রামে মাদক বিরোধী অভিযানে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর স্থাণীয় এলাকাবাসির সাথে তাদের কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে ওই ব্যক্তিকে জোর পূর্বক ছাড়িয়ে নেওয়ায় ওই রাতেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সংবাদকর্মী ও স্থানীয় এলাকাবাসীসহ ৯জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ২০/৩০ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা। এরপর রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। এদিকে, এ ঘটনার পর থেকে গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকায় পুরুষ শুন্য হতে চলেছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মাহমুদ গাজী (৫৫), আহাদ আলীর ছেলে তরিকুল ইসলাম (৩৫), তরিকুলের ভাই শরিফুল ইসলাম (৩৮) ও স্থানীয় ঘটক গোলাম হোসেন (৬৫)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়ে গত রবিবার নাংলা গ্রামের আহাদ আলীর ছেলে এবাদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। পরে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে ওই পরিবারের সদস্যদের কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে হাজির হন স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহামুদ গাজী ও স্থানীয় সংবাদকর্মী আবু সাঈদ। ঘটনা শুনে সেখানে দেখতে আসেন স্থানীয়রাও। এসময় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণের কর্তৃপক্ষের সাথে গোলোযোগের উপক্রম হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে মোবাইল ফোনে অবহিত করেন মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকজন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী সেখানে হাজির হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন এবং উভয়কে উপজেলায় আসার জন্য নির্দেশ দেন। সেই মোতাবেক অভিযুক্ত এবাদুল, ইউপি সদস্য, সংবাদকর্মীসহ অনেকেই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসে এসে ঘটনার বিবরণ দেন। একই সাথে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তাদের অভিযোগ শোনেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এরপর উভয়ই উপজেলা পরিষদ চত্ত্বর ত্যাগ করেন। এরপর রাতে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক রাসেল কবির বাদী হয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মাহমুদ গাজী, সাংবাদিক আবু সাঈদসহ ৯ জনের নাম উল্লেখসহ ২০/৩০ জন অজ্ঞাত আসামী করে দেবহাটা থানায় মামলা দায়ের করে। এতে সরকারি কাজে বাধা, আসামীকে জোরপূর্বক ছাড়িয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ করা হয়। উক্ত মামলা দায়েরের পর পুলিশের অভিযানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মাহমুদ গাজী, তরিকুল ইসলাম, ভাই শরিফুল ইসলাম ও স্থানীয় ঘটক গোলাম হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সাতক্ষীরা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক রাসেল কবির জানান, তারা অভিযান চালিয়ে এবাদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে মাদকসেবনের উপকরণসহ আটক করে। পরে তাকে ছাড়িয়ে নিতে তাদের উপর হামলা চালানো হয়। এতে তাদের টিমের ২ সদস্য আহত হন। পরে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক সরকারি কাজে বাধা ও আসামী ছিনিয়ে নেওয়ায় ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
তবে স্থানীয়রা জানান, এ ঘটনার পর থেকে গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকায় পুরুষ শুন্য হতে চলেছে।
দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ ওবাইদুল্লাহ জানান, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তাদেরকে কোন তথ্য না দিয়েই সেখানে অভিযান পরিচালনা করেন। এরপর রাতে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণের পক্ষ থেকে উপ-পরিদর্শক রাসেল কবির বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখসহ ২০/৩০ জন অজ্ঞাত আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ৪ জন আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, বাকি আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানান, বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আনুষ্ঠানিকভাবে উভয় পক্ষ চলে যায়। পরে শুনেছি সাতক্ষীরা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে বেশ কিছু লোককে আসামী করা হয়েছে। তবে এতে জনপ্রতিনিধি ও সংবাদকর্মীকে আসামী করার বিষয়টি তার জানার বাইরে বলে তিনি জানান। তিনি আরো জানান, মাদকের ব্যবহার বন্ধে সবধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
পূর্ববর্তী পোস্ট