দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর কেন্দ্রীয় কমিটির শূন্য পদে কমিটি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। রোববার (৩১ জানুয়ারি) সংগঠনটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ৬৮ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটি ঘোষণা করা হয়।
ঘোষিত কমিটিতে সহ-সভাপতি করা হয়েছে সাইফ উদ্দিন বাবু, সাগর হোসেন সোহাগ, রায়হান কাওসার, রাকিব হোসেন, রানা হামিদ, আনন্দ সাহা পার্থ, শেখ সাগর আহমেদ, শুভ্রদেব হালদার, দেবাশীষ সিকদার সিদ্ধার্থ, আরিফ ইবনে আলী, আরিফ হোসেন রিফাত, জিয়াসমিন শান্তা, তিলোত্তমা শিকদার, শাহারিয়ার সিদ্দিকী শিশির, ফরিদা পারভীন, উৎপল বিশ্বাস, মো. ওমর ফারুক, মিজানুর রহমান পিকুল, মুরাদ হায়দার টিপু, ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী সজীব, রাকিবুল হাসান নোবেল, খাদিজাতুল কোবরা, মো. মহিন উদ্দিন, রকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য, জেসমিন আরা রুমা।
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন আব্দুল জাব্বার রাজ। দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মেহেদি হাসান সানি, পাঠাগার সম্পাদক সৈয়দ ইমাম বাকের, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক খন্দকার জামি উস সানি, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক তুহিন রেজা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা বিষয়ক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ ফয়সাল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক আল-আমিন রহমান।
উপ-প্রচার সম্পাদক ফেরদৌস মাহমুদ পলাশ, উপ-দপ্তর সম্পাদক সজীব নাথ, সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম খান শিমুল, উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক তন্ময় দেবনাথ, আমান উল্লাহ আমান, উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. মোরশেদুর রহমান আকন্দ, শেখ নাজমুল, মো. মাইনুল হাওলাদার, ইসমাইল হোসেন, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, উপ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সামাদ আজাদ জুলফিকার, উপ-পাঠাগার সম্পাদক এম আর মুকুল, আনোয়ার হোসেন, উপ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. আব্দুর রশিদ (রাফি), উপ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মো. আতিকুল ইসলাম (আতিক), উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক শাহেদ খান, উপ-তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এহসান পিয়াল, উপ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াহিদ খান রাজ, উপ-স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা বিষয়ক সম্পাদক রাজ্যে বৈশ্য, জেরিন সিকদার, সাধন বিশ্বাস, মো. রিজভান আহমেদ, উপ-ছাত্রবৃত্তি সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, উপ-কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক শাজাহান ভূঁইয়া শামীম।
সহ-সম্পাদক মনোনীত হয়েছে, ফারুকুল ইসলাম, ফাইজুল ইসলাম সজীব, শেখ রিজওয়ান আলী, আয়শা আক্তার সুমি, এম সাইফুল ইসলাম সাইফ, এইচ এম রোমান মাহমুদ, মো. রুবেল শিকদার, মীর সাব্বির, জাহিদুল ইসলাম নোমার।
এছাড়াও সাজিদ আহমেদ দীপ্ত এবং আলী হোসেন আলমকে সদস্য করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ছাত্রলীগ ঐতিহ্যবাহী ও দেশের সবচেয়ে বড় সংগঠন। ফলে নেতা নির্বাচনেও অনেক সচেতনতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এতদিন যাচাইবাছাই করা শেষে কমিটি দেয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে সামনে রেখে এই শূণ্যপদগুলো পূরণ করা হয়েছে।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংগঠনের কমিটি করতে সকল পদ পূরণ করা হয়েছে। ব্যাপক যাচাইবাছাইয়ের কারণে আগেই সবগুলো পূরণ করা যায়নি। তবে ছাত্রলীগের প্রধান দিক নির্দেশক দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মতো কমিটি পূর্ণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি সামনে ছাত্রলীগকে আরও গতিশীল করবে। দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করবে। এ সময় সংগঠন পরিচালনায় সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলনের পর ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই সভাপতি পদে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক পদে গোলাম রাব্বনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, স্বজনপ্রীতিসহ নানা অভিযোগে পূর্ণাঙ্গ মেয়াদে দায়িত্ব পালনের আগেই ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এই দুই নেতা। তাদের অব্যাহতির পর সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান লেখক ভট্টাচার্য। ৩ মাস ভারপ্রাপ্ত থাকার পর ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তাদেরকে পূর্ণাঙ্গ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এর আগে সভাপতি পদে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক পদে গোলাম রাব্বন দায়িত্ব পাওয়ার এক বছর পর ২০১৯ সালের ১৩ মে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহি সংসদের ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। আর কমিটি ঘোষণার পরপরই প্রশ্ন উঠে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ পাওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে। অভিযোগ ওঠে কমিটিতে যোগ্যদের স্থান না দিয়ে বিতর্কিত এই কমিটিতে স্থান পেয়েছেন হত্যা-চেষ্টা মামলার আসামি, মাদকসেবী, বিএনপি-জামায়াত ও রাজাকার পরিবারের সন্তান, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজিতে যুক্ত, বিবাহিত, সংগঠনে নিষ্ক্রিয় এবং অ-ছাত্ররাও। এছাড়াও সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন ছাত্রলীগের পদ বঞ্চিত ও পদ না পাওয়া নেতা-কর্মীরা।
পরবর্তীতে দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর জয়-লেখক তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বিতর্কিত ২১ জনের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের পদ শূণ্য ঘোষণা করেন। পাশাপাশি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আরো ১১ জনের পদ শূন্য ঘোষণা করেন তারা।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নথি জালিয়াতির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত বদলে দেয়ার অভিযোগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সহ-সভাপতি তরিকুল ইসলাম মুমিনকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। এর বাইরে বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ সহ-ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির মোট ৪৮টি পদ শূন্য হয়।